কলকাতা: আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্দরেই নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল। ‘সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ’ (Kasba Law College)-এর সাম্প্রতিক ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছে গোটা শহরে। কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই এক ছাত্রীকে টেনে নিয়ে গিয়ে তার উপর ঘটে গণধর্ষণের অভিযোগ। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই নড়ে বসেছে রাজ্যের শিক্ষা মহল। সরব হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নিজেও।
শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত ক্ষোভের। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি হতবাক, আমি মর্মাহত। কলেজে এই ধরনের ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়।’’ সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন কলেজ (Kasba Law College) কর্তৃপক্ষের কাছে। কীভাবে কলেজ চত্বরে এমন অপরাধ সংঘটিত হল, কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যর্থ হল, তার জবাব চাওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শিক্ষা দফতরের তরফ থেকেও কলেজ (Kasba Law College) কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কলেজের গভর্নিং বডিকে দ্রুত বৈঠক ডাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার সেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসার কথা। সেখানে কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খামতি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি, ভবিষ্যতে কীভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা যায়, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে খবর। কলেজে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র চাপানউতোর। বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কলেজ (Kasba Law College) ক্যাম্পাসের ভিতরে নিরাপত্তার অভাব, দাদাগিরি ও শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে সরব হয়েছে তারা। প্রশ্ন উঠেছে—কেন রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ইউনিয়ন রুমগুলি দীর্ঘদিন ধরে শাসক দলের দখলে? কেন বারবার ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে?
বিরোধীদের দাবি, শুধু অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলেই চলবে না, গোটা ব্যবস্থার বদল আনতে হবে। কলেজ চত্বরে রাজনৈতিক প্রভাব খতিয়ে দেখতে হবে। ছাত্র রাজনীতিকে রাজনৈতিক দলগুলির হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।
অন্যদিকে, শাসক দল এই ঘটনা নিয়ে সাফাই দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ‘‘অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে দলমত নির্বিশেষে। সরকার কোনো পক্ষপাত করছে না। আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ পাশাপাশি ‘অপরাজিতা বিল’ দ্রুত আইন হিসেবে কার্যকর করার দাবিও জানিয়েছে শাসক দল। তাদের মতে, এই বিল কার্যকর হলে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ আরও কঠোরভাবে রোখা যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় ফাঁকফোকর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে হলে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি, কলেজ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং শিক্ষা দফতর—সবার মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতেই হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর এই তৎপরতা পরিস্থিতি কতটা বদলাতে পারবে, সেটা সময়ই বলবে। তবে আপাতত কলেজে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ। অভিভাবকদের মধ্যেও ছড়িয়েছে উদ্বেগ। রাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই এখন নজর সকলের।