কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবার আইন কলেজে (Kasba Law College) প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপর ঘটে যাওয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে এবার নতুন মোড়। পুলিশ এবার নির্যাতিতার মা-বাবার গোপন জবানবন্দি (In-Camera Testimony) নিতে চাইছে।
এই জন্য আদালতে বিশেষ আবেদন করেছে তদন্তকারী দল। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের স্বার্থে এবং মামলার প্রমাণ পোক্ত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আদালতে পুলিশের আবেদন
গতকাল আলিপুর আদালতে নির্যাতিতা ছাত্রীর গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এবার তারই ধারাবাহিকতায় পুলিশ নির্যাতিতার মা-বাবারও গোপন জবানবন্দি নিতে চায়।
তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, ঘটনার আগে এবং পরে নির্যাতিতার মানসিক অবস্থার কথা জানতে মা-বাবার বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সেই কারণেই আইনি পথে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
নির্যাতিতার অভিভাবকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ
তদন্তকারীরা মনে করছেন, নির্যাতিতার অভিভাবকদের বক্তব্য মামলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। বিশেষ করে, ঘটনার আগে নির্যাতিতা কীভাবে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, ঘটনার পরে কী অবস্থায় বাড়িতে ফিরেছিলেন— এসব তথ্য বিচারকের সামনে উপস্থাপন জরুরি।
তবে, আদালত এই আবেদন গ্রহণ করবে কিনা, তা এখনই নিশ্চিত নয়। দ্রুত শুনানি হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
NCW-এর তিন সদস্যের পরিদর্শন
এর মধ্যেই শনিবার কসবার ওই ল কলেজে (Kasba Law College) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জাতীয় মহিলা কমিশনের (NCW) তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা সরেজমিনে কলেজ (Kasba Law College) ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন এবং নির্যাতিতার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়াও তারা কলেজ (Kasba Law College) কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তবে তদন্তের কারণে পুলিশের তরফ থেকে প্রতিনিধি দলকে ক্রাইম স্পটের ছবি তুলতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
NCW-এর দাবি, পুলিশের বাধা অনুচিত
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য অর্চনা চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা NCW গাইডলাইন অনুযায়ী কাজ করছি। তাতে স্পষ্টভাবে বলা আছে, কমিশনের প্রতিনিধি দল প্রয়োজনীয় ছবি তুলতে পারে। পুলিশের এই বাধা একেবারেই অনুচিত।’’ তবে পুলিশের দাবি, তদন্তের স্বার্থে কোনও তথ্য বা ছবি বাইরে না যাওয়াই ভালো।
পুলিশের তরফে তদন্তে গতি
কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) ইতিমধ্যেই ঘটনার দিন কলেজের (Kasba Law College) সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ধৃত তিন অভিযুক্তের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বিভিন্ন ফরেনসিক নমুনা পরীক্ষা চলছে। নিরাপত্তার গাফিলতির অভিযোগে কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রশাসনের তৎপরতা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের উচ্চ শিক্ষা দপ্তর কলেজ (Kasba Law College) কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার তদারকি করা হবে।’’ এদিকে বিভিন্ন মহিলা সংগঠন এবং ছাত্র সংগঠনও কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, আদালতের অনুমতি পেলেই নির্যাতিতার মা-বাবার গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে। SIT-এর এক সদস্য বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের দরকার। সেই কারণেই এই পদক্ষেপ।’’