কসবা ডি আই অফিসে বাম মিছিল, পুলিশের লাঠিচার্জ

চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পুনর্বহালের দাবিতে কসবার (Kasba) স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) অফিসের সামনে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামপন্থী সংগঠনের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল…

Kasba CPM protest

চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পুনর্বহালের দাবিতে কসবার (Kasba) স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) অফিসের সামনে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামপন্থী সংগঠনের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বামপন্থী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা অংশ নেন।

তাঁদের দাবি ছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবিলম্বে চাকরিতে ফেরানো হোক। তবে, মিছিলটি ডিআই অফিসের গেটে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনায় একাধিক বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন, এবং কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে খবর।

   

বিক্ষোভের পটভূমি (Kasba)

২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। এই রায়ে বলা হয়, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে। তবে, ১৭ এপ্রিলের একটি পরবর্তী রায়ে আদালত জানায়, যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত চাকরি চালিয়ে যেতে পারবেন।

কিন্তু, (Kasba) শিক্ষাকর্মীদের জন্য কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশ না থাকায় তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম-সহ বামপন্থী সংগঠনগুলো যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের পুনর্বহালের দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু করে।

 আজ কসবার (Kasba) ডিআই অফিসে সিপিএমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্য সরকার যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি ন্যায়বিচার করছে না। আমরা তাঁদের পাশে আছি এবং তাঁদের চাকরি ফেরানোর জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।” বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, স্কুল পরিদর্শকের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া এবং যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের জন্য চাপ সৃষ্টি করা।

পুলিশের লাঠিচার্জ ও উত্তেজনা

সকালে কসবার (Kasba) ডিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। পুলিশ সকাল থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। অফিসের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, এবং ব্যারিকেড দিয়ে প্রবেশপথ বন্ধ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা তালা ভেঙে অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ লাঠিচার্জ করে, যাতে একাধিক বিক্ষোভকারী আহত হন।

পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা প্রথমে হামলা চালিয়েছিল, এবং ছয়জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করায় বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করতে হয়।”

বাম নেতাদের প্রতিক্রিয়া

সিপিএম নেতারা (Kasba) এই লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা করেছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “এটি রাজ্য সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী মনোভাবের প্রমাণ। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের উপর লাঠিচার্জ করে সরকার তাঁদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে।” তিনি আরও বলেন, চাকরিহারাদের পাশে থাকার জন্য বামপন্থী সংগঠনগুলো আন্দোলন আরও জোরদার করবে।

Advertisements

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “বামপন্থীরা রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাকরিহারাদের ব্যবহার করছে। রাজ্য সরকার যোগ্য প্রার্থীদের জন্য আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে।” তিনি পুলিশের পদক্ষেপকে সমর্থন করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ বাধ্য হয়েছে।

পুরীর মহাপ্রসাদ এবার বাংলায়, রথযাত্রায় বিলি করবেন শুভেন্দু

চাকরিহারাদের দাবি

চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা দাবি করছেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করুক। তাঁরা বলেন, “আমরা যোগ্য, কিন্তু আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই।” বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, চাকরি হারানোর পর তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ

কসবা (Kasba) ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় একই দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। মালদহ, বালুরঘাট, হুগলি প্রভৃতি জেলায় চাকরিহারারা ডিআই অফিস ঘেরাও করেছেন। মালদহে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে, এবং হুগলিতে বিক্ষোভকারীরা জিটি রোড অবরোধ করেন।

কসবার (Kasba) ডিআই অফিসে সিপিএমের মিছিল ও পুলিশের লাঠিচার্জ চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্দোলনকে আরও তীব্র করেছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বামপন্থী সংগঠনগুলো এই আন্দোলনকে আরও বড় করার ঘোষণা দিয়েছে, যখন রাজ্য সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছে। আগামী দিনে এই আন্দোলন কোন দিকে যায়, তা রাজ্যের শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।