যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে ঘটানো কিছু বিতর্ক এবং পরবর্তী পরিস্থিতি কলেজে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দেবাশিস কুমারকে। তাঁর জায়গায় নতুন সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এই পরিবর্তনটি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এক বড় প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। তবে আসল ঘটনাটি ছিল কলেজের ক্যাম্পাসে সরস্বতী পুজো নিয়ে ঘটানো কিছু অশান্তি, যা শেষপর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌঁছেছে।
যদিও সরস্বতী পুজো সাধারণত একটি উৎসবের দিন হয়ে থাকে, তবুও এই বছর যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে এটি বিরাট বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছিল, বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের হুমকি ও মারধর চালাচ্ছে, এমনকি ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনাতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল যুব নেতা সাব্বির আলির। এই বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ জানালেও, তাদের দাবি অনুযায়ী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি। এরই মধ্যে কলেজের ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতা এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলেন এবং ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন। তাঁর নির্দেশে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছান এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়ে আলোচনা করেন। শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতির পরেও ছাত্র-ছাত্রীরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়, এবং তাদের বক্তব্য ছিল কলেজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, যার কারণে তারা শঙ্কিত।
এমন পরিস্থিতিতে দেবাশিস কুমারের পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অরূপ বিশ্বাসকে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। অরূপ বিশ্বাসকে সভাপতি করার মূল কারণ ছিল, বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীদের বক্তব্য শোনা এবং তাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, অরূপ বিশ্বাস সরাসরি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তাদের দাবিগুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন।
দেবাশিস কুমারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অভিযোগ ছিল যে, সাব্বির আলির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ওঠা অভিযোগগুলির ব্যাপারে তিনি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি। তাদের মতে, দেবাশিস এই সমস্যাগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দেননি, এবং ফলস্বরূপ পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। এখন প্রশ্ন উঠছে, অরূপ বিশ্বাস কি ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যার প্রতি সত্যিই মনোযোগ দেবেন এবং এই কলেজের পরিস্থিতি শান্ত করতে পারবেন?
এছাড়া, এই ঘটনা কলকাতার রাজনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে। রাজ্যের মন্ত্রীরা ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে যখন সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন, তখন এটা স্পষ্ট যে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ও হস্তক্ষেপের বিষয়টি কখনও কখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভবিষ্যতে, এই পরিবর্তন কীভাবে কলেজের পরিবেশে প্রভাব ফেলবে, সেটাও লক্ষ্যণীয়।