Recruitment Controversy: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে ফের চরম টানাপোড়েন। ২০১৬ সালের স্কুল শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল বাতিল করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, বাতিল হওয়া প্যানেলের ভিত্তিতে কোনও নিয়োগ বৈধ নয়। ফলে রাজ্য সরকারকে ফের নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী আগামী ৩০ মে রাজ্য সরকার নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চলেছে। সমস্ত নিয়ম মেনেই নিয়োগ হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তে খুশি নন সেই ২৬ হাজারের বেশি ‘যোগ্য’ শিক্ষক, যাঁরা ইতিমধ্যেই নিয়োগ পেয়েছিলেন, পরে চাকরি হারিয়েছেন।
‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’ দাবি করছে, তাঁরা একবার পরীক্ষা দিয়ে যোগ্য প্রমাণ করেছিলেন, এবার আবার তাঁদের একই প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা অনুচিত। তাঁদের মতে, দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন কিছু ব্যক্তি, তার দায় কেন সবাইকে নিতে হবে? তাঁরা বারবার বলছেন, “আমরা চাকরি চুরি করিনি, যোগ্যতার ভিত্তিতে পেয়েছিলাম। তাহলে আবার কেন পরীক্ষায় বসতে হবে?” সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবার তাঁরা পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই প্রতিবাদ অবশ্য সাধারণ কোনও প্রতিবাদ নয়। আন্দোলনের ধার একেবারেই ব্যতিক্রমী ও নজরকাড়া। ৩১ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে ৩০ মে অর্থাৎ শুক্রবার, ‘অর্ধনগ্ন মিছিল’ করে তাঁরা তাঁদের দাবি তুলে ধরবেন। শিয়ালদহ থেকে নবান্ন পর্যন্ত এই প্রতিবাদ মিছিলের আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর মুখপাত্র চিন্ময় মণ্ডল জানিয়েছেন, “আমরা ১১টা নাগাদ শিয়ালদহে জমায়েত করব। সেখান থেকে নবান্নমুখী পদযাত্রা হবে। আমাদের একটাই দাবি— আর কোনও পরীক্ষা নয়, আমাদের সসম্মানে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।”
যদিও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট বার্তা, তাঁরা আন্দোলনের ভাষা বুঝলেও, আদালতের নির্দেশ অমান্য করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও জানিয়েছেন, “সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করতে হবে। সেই অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন করে কোনও লাভ হবে না, পরীক্ষাতেই ফিরতে হবে।” শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমরা তাঁদের জন্য নতুনভাবে সুযোগ করে দিচ্ছি। এর বাইরে কিছু করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
এই পরিস্থিতিতে ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের মনোবেদনা, ক্ষোভ এবং অপমানবোধ আরও বেড়েছে। তাঁদের দাবি, সরকার চাইলেই এই পরিস্থিতিতে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে কোনও বিকল্প পথ বের করতে পারত। এদিকে সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষা মহলে এই আন্দোলন ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, অর্ধনগ্ন মিছিল শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদার পরিপন্থী। আবার কেউ বলছেন, তাঁদের যন্ত্রণা এতটাই গভীর যে এই ধরনের চরম পথে না গিয়ে আর উপায় ছিল না।
সব মিলিয়ে ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি এবং তা ঘিরে পরবর্তী পরিস্থিতি রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রকে বারবার অস্থির করেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী নিয়োগের আইনি দিক একরকম হলেও, মানবিক দিক আরেক প্রশ্ন তোলে— যেখানে একবার যোগ্য প্রমাণিত হয়ে কাজ পাওয়া প্রার্থীদের ফের সেই প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও, এই আন্দোলন আগামী দিনে প্রশাসনের সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এখন দেখার, ৩০ মে-র অর্ধনগ্ন মিছিল রাজ্য সরকারকে কোনওভাবেই নরম করে কি না, না কি আইনের পথে নিয়োগ চালিয়েই সরকার তার অবস্থানে অনড় থাকে।