‘আমাদের দুঃখ শুনুন’- মুখ্যমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রীকে খোলা চিঠিতে অনুরোধ চাকরিহারাদের

West Bengal teacher protest: রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার প্রাক্তন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারানো প্রায়…

west bengal teachers protest

West Bengal teacher protest: রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এক গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার প্রাক্তন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারানো প্রায় ২৬ হাজারেরও বেশি কর্মী আজ পথে। ‘যোগ্য শিক্ষক চাকরিহারা মঞ্চ’-এর ব্যানারে তাঁরা আজ বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। তাঁদের একটাই প্রশ্ন—“আমাদের ভবিষ্যৎ কী?”

এই আন্দোলনের মূল কথা একটাই—চাকরি ফেরানোর দাবি, নতুন করে পরীক্ষা নয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনে নিয়োগ পেয়েছিলেন, বছরের পর বছর ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দিয়ে এসেছেন, তাঁদের কাজকর্মের কোনও ত্রুটি ছিল না। তবুও কিছু কারিগরি ত্রুটির দায় তাঁদের ঘাড়ে এসে পড়েছে, যা অন্য কেউ করেছে। তার দায়ে শিক্ষা থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া এক নির্মম ও অন্যায্য সিদ্ধান্ত।

   

এই অবস্থায় আন্দোলনকারীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছেন। তাঁদের দাবি, পরীক্ষা নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাঁদের সমস্যার সমাধান হোক। এই প্রেক্ষিতেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি দিয়েছেন। জানা গেছে, গত সোমবার রাতেই তাঁদের তরফে একটি মেইল করা হয়, যেখানে আন্দোলনকারীরা বিস্তারিতভাবে তাঁদের পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং আলোচনার আবেদন জানান। তাঁরা প্রস্তাব দেন, আগামী বুধবার বিকেলে যদি মুখ্যমন্ত্রী সময় দেন, তবে তাঁরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

কিন্তু সেই মেইলের কোনও জবাব না আসায় তাঁরা বাধ্য হয়ে একটি খোলা চিঠি জমা দেন। এই চিঠি শুধুমাত্র তাঁদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং একটি শান্তিপূর্ণ, যুক্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান চাওয়ার চিত্র। আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, “আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান। আমরা রাজপথে নেমেছি বাধ্য হয়ে, কারও ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে নয়। আমাদের একটাই চাওয়া—আমরা যেন আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারি।”

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বারবার বলেছেন, তিনি সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন। শিক্ষাক্ষেত্রে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও নিযুক্ত কর্মীদের পুনর্বাসন দিতে তাঁর সরকার উদ্যোগ নেবে—এই আশা অনেকেই করছেন। তবে এখন প্রশ্ন একটাই—সরকার কবে সংলাপে বসবে?

Advertisements

শিক্ষার প্রশ্নে এই ধরনের সংকট শুধু ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর প্রভাব পড়ে গোটা শিক্ষাব্যবস্থার উপর। একদিকে হাজার হাজার কর্মী কাজ হারিয়ে মানসিক ও আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন, অন্যদিকে বহু স্কুলে শিক্ষকসংকট তৈরি হয়েছে। এই দুই সমস্যার একসঙ্গে সমাধান সম্ভব—যদি আলোচনায় বসা হয় এবং বাস্তবসম্মত ও মানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চাকরিহারা এই শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের আন্দোলন এখন এক নৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি রাজ্য সরকারকে দাঁড় করিয়েছে। এ লড়াই শুধুমাত্র একটি চাকরি ফেরানোর লড়াই নয়, বরং এ এক আত্মসম্মান ও ন্যায়ের লড়াই। এখন দেখার, সরকার কীভাবে এই সংকটের জবাব দেয়—নীরব থেকে, না কি আলোচনার টেবিলে এসে।

আশা করা যায়, যাঁরা বছরের পর বছর শিক্ষা দিয়ে এসেছেন, তাঁদের স্বপ্নভঙ্গ হবে না। সরকার এই সংকটের দায়িত্ব নেবে এবং উপযুক্ত সমাধানসূত্র খুঁজে বের করবে। আর সেই সমাধানের পথ হোক—আলোচনা ও মানবিকতা।