নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় শনিবার সকালে থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জয়নগরের মহিষমারি এলাকা (Jaynagar Child Murder)। এই ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে সেখানকার গ্রামবাসীরা। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার পর পাল্টা গ্রামবাসীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। সবমিলিয়ে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে শনিবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মহিষমারি। জানা যাচ্ছে, শুক্রবার রাতে মহিষমারি এলাকায় পুকুর থেকে উদ্ধার হয় চতুর্থ শ্রেণীর সেই শিশুর দেহ।
দুপুরে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ওই নাবালিকা। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলেও কোচিং থেকে আর বাড়ি ফেরেনি চতুর্থ শ্রেণির সেই ছাত্রী। এরপর নিজেদের সন্তানের খোঁজ না পেয়ে মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ প্রথমে তাঁদের কথায় কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁদের বলা হয়েছিল, জয়নগর থানায় অভিযোগ জানাতে। পরিবারের দাবি, অভিযোগের কথা শুনেই পুলিশ তৎপর হয়ে উঠলে শিশুটিকে হয়তো বাঁচানো যেত।
জানা যাচ্ছে, বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই পুকুর থেকে শুক্রবার রাতে উদ্ধার হয় নিহত শিশুটির দেহ। তবে ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত তরুণ জয়নগরের বাসিন্দা। দোষীর কঠোর শাস্তির দাবির কথা জানিয়েছে পরিবার। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর আজ সকালে উত্তেজনা ছড়ায় মহিষমারি এলাকায়। সেখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে গ্রামবাসীরা। সকালে লাঠি, ঝাঁটা হাতে পুলিশকে তাড়া করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়েন গ্রামবাসীরা।
পাল্টা গ্রামবাসীদের আটকাতে উত্তেজিত জনতার দিকে বন্ধুক তাক করে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করতে শুরু করে পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশের ওপর ক্ষোভ উগরে সেখানে লোহার গেট বেঁকিয়ে ফাঁড়ির ভিতরে ঢুকে তান্ডব চালায় গ্রামবাসীরা। থানা ঘিরে ফেলে থানায় ভাঙচুরও করা হয়। জনরোষে তছনছ হয়ে গিয়েছে মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়া দেওয়ার পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ নথি। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
থানাতে নথি থেকে শুরু করে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই বলে জানা যাচ্ছে। সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক গণেশচন্দ্রা মন্ডল ঘটনাস্থলে এলে তাঁকে তাড়া করেন গ্রামবাসীরা। সেইসঙ্গে সেই তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের ওপরে শাসানোর অভিযোগও তুলেছে তাঁরা। বর্তমানে একেবারে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে জয়নগরের মহিষমারি এলাকা। এর মধ্যে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে মহিষমারিতে নাবালিকা ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন সুকান্ত মজুমদার।
সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, “স্তম্ভিত! শিহরিত! কুলতলী থানা এলাকার কৃপাখালী এলাকায় টিউশন পড়ে ফেরার পথে বলপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হলো চতুর্থ শ্রেণীর একজন নাবালিকা ছাত্রীকে। পরে নদীর চর থেকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করলেন ছোট্ট মেয়েটির নিথর দেহ। মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ বাংলার অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার প্রশ্ন, দেবীপক্ষের সূচনাতেও নিস্তার নেই বাংলার মেয়েদের! আপনার অপশাসনে আর কতগুলি বাংলার মেয়ের এই পরিণতি হবে!! ছিঃ” জানা যাচ্ছে, আগামীকাল অর্থাৎ রবিবার কুলতলী থানা ঘেরাও কর্মসূচি করতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি।