যাদবপুরে উপাচার্য অপসারণের প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তের অপসারণের ঘটনা, যেটি তাঁর অবসর গ্রহণের মাত্র চার দিন আগে ঘটল, তা একাধিক প্রশ্ন এবং বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।…

Lalbazar special team reaches Jadavpur University

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তের অপসারণের ঘটনা, যেটি তাঁর অবসর গ্রহণের মাত্র চার দিন আগে ঘটল, তা একাধিক প্রশ্ন এবং বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি এবং শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে চলতে থাকা অশান্তি এবং ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক উঠেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও উঠেছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতা।

Advertisements

২৭ মার্চ, ২০২৫ তারিখে রাজভবন থেকে এক চিঠির মাধ্যমে উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে জানানো হয় যে, তাঁর নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা হচ্ছে এবং তাকে তৎকালীনভাবে অপসারণ করা হচ্ছে। এটি একটি চমকপ্রদ এবং অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ ছিল, কারণ উপাচার্যকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার অবসরের মাত্র চার দিন আগে। যদিও চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কোনো নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি, তবে এর ফলে অনেকেই মনে করছেন যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অশান্তির কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক মাস ধরে চলা অশান্তি এবং ছাত্র আন্দোলন বিশেষ গুরুত্ব পায়। ওয়েবকুপার বৈঠককে কেন্দ্র করে এই অশান্তি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ছাত্ররা উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে নানা স্লোগান দিয়েছে এবং তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর অবস্থান এবং প্রতিক্রিয়া নিয়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং শিক্ষাবিদরা এ বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন এবং পরিস্থিতির প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অপসারণের পর, উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, ‘‘আজকের দিন ধরলে অবসরের ৪ দিন বাকি। কেন এই নির্দেশ, তার কোনো কারণ লেখা নেই ওই চিঠিতে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসি, ভালো বা খারাপ লাগার ঊর্ধ্বে আমি। যখন বিশ্ববিদ্যালয় ডাকবে, আমি আছি।’’

এই পদক্ষেপটি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও রাজভবন বা রাজ্য সরকারের তরফে এর পেছনের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানানো হয়নি, তবে এটি স্পষ্ট যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অশান্তি এবং ছাত্রদের প্রতিবাদের চাপের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপও হতে পারে।

এছাড়া, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং তিনি জানান, চিঠিটি পেয়েছেন এবং এর বিষয়ের সাথে পরিচিত। তবে এখনো পর্যন্ত কোনও সরকারি ব্যাখ্যা বা প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

অবশেষে, এই ঘটনা একদিকে যেমন শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের উদাহরণ হতে পারে, তেমনি অন্যদিকে এটি রাজনৈতিক এবং সামাজিক অশান্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বলেও দেখা হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের এই অপসারণের সিদ্ধান্তের পেছনে থাকা আসল কারণ এবং এর প্রভাব কী হবে, তা বুঝতে আরও সময় লাগবে।