যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) অশান্তির ঘটনায় পুলিশি হেনস্তার অভিযোগে ফের কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসএফআই সমর্থক উদ্দীপন কুণ্ডু এই মামলা দায়ের করেন। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে মঙ্গলবার মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
মামলাকারীর অভিযোগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) ছাত্রছাত্রীদের বারবার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাচ্ছে। শুধু ডেকে পাঠানো নয় তাদের উপর অকারণে হেনস্থাও করা হচ্ছে। গত ৭ মার্চও তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। অভিযোগ, সেই সময় তাদের মোবাইল চাওয়া হয় কিন্তু তারা আপত্তি জানান। এরপরও তাদের হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ। সোমবার আবারও তাদের তলব করা হয়েছে। পুলিশের অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে উদ্দীপন কুণ্ডু হাই কোর্টে এই মামলা দায়ের করেন এবং দ্রুত শুনানির আর্জি জানান।
এদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অশান্তির ঘটনায় রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ১ মার্চ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভা চলছিল। এই দিনেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ দেখায়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়, তিনি মৃদু চোট পান এবং এসএসকেএম হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। এর পরই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ঘটনায় পুলিশি ভূমিকা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে প্রশ্ন তোলা হয়। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই ঘটনায় পুলিশি গাফিলতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলেন এবং দাবি করেন যে, শিক্ষামন্ত্রীর নিরাপত্তায় বড়সড় অবহেলা ছিল।
উদ্দীপন কুণ্ডুর অভিযোগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার ডেকে পাঠানো হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ তাদের মোবাইল চাওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা আপত্তি জানায়। এরপরও পুলিশ তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে।’ তিনি আরও জানান, ‘এখনও পর্যন্ত পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ করেনি, তবুও তাদের বারবার তলব করা হচ্ছে।’ তার দাবি, পুলিশের অতিসক্রিয়তা কোনো ধরনের তদন্ত নয়, বরং সন্ত্রাস সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।
এসএফআই সমর্থক এই ছাত্রের দাবি, পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকলেও, তাকে এবং তার সহপাঠীদের বারবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাচ্ছে এবং তাদের অবাধ চলাফেরা আটকে দেওয়া হচ্ছে। উদ্দীপন কুণ্ডু আরও বলেন, ‘পুলিশের এই অতিসক্রিয়তা শুধু তাদের উদ্দেশ্যই নয়, বরং এটা ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার একটা উপায়।’ তিনি দ্রুত হাই কোর্টে এই বিষয়ে শোনার জন্য আবেদন করেছেন কারণ তিনি মনে করেন যে, পুলিশ এইভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে এবং তার শিক্ষাজীবনকে প্রভাবিত করছে।
এই ঘটনাটি নিয়ে এখন রাজনৈতিক বিতর্কও বাড়ছে। বিরোধী দলগুলো রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, পুলিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ধরনের হেনস্তা চালাচ্ছে। তাদের দাবি, শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ভাঙা এবং বিক্ষোভের ঘটনা যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা উচিত। তবে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তির ঘটনা ছিল একান্তই ছাত্রদের মধ্যকার সমস্যা, যা পুলিশের হস্তক্ষেপের দরকার ছিল।
কলকাতা হাই কোর্টে এখন এই মামলার শুনানি হচ্ছে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। উদ্দীপন কুণ্ডু এই মামলার মাধ্যমে আরও একটি দিক তুলে ধরেছেন, যেখানে ছাত্রদের ওপর পুলিশের অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের মন্তব্য, ‘শিক্ষামন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের গাফিলতি ছিল, সেটি তদন্ত হওয়া উচিত’—এই মন্তব্যের পর সবার নজর এখন আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তে।