দেশজুড়ে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাঁদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এতেই বিপাকে পড়েছেন ভারতীয় বাঙালিদের একাংশ। নিজের রাজ্যের বাইরে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ত্রিপুরার বাঙালিদের অনেকেই। পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারে তীব্র আতঙ্ক। অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঙালিদের নিশানা করা হচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে। এ নিয়ে সরব বাংলাপক্ষ (Bangla Pokkho)। তাদের প্রশ্ন, “ভারতীয় বাঙালিকে কেন বাংলাদেশি বলে হেনস্থা করা হবে? ভাষার জন্য কেন বৈষম্য হবে?”
বাংলাপক্ষের প্রশ্ন যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু এই পরিস্থিতির দায় কি তাঁদেরও নেই? বিভিন্ন সময়ে বাংলায় থাকা অবাঙালিদের তারা নিশানা করেছে। অবাঙালি হকারদের আক্রমণ করেছে, অবাঙালি ব্যবসায়ীদের কটাক্ষ করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাপক্ষের জন্মলগ্ন থেকেই এসব চলছে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, “বাংলাপক্ষের এই অবস্থান থেকে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ভিনরাজ্যে থাকা বাঙালিদের বিপদ হতে পারে।” বাংলাপক্ষের অবস্থান বদলায়নি। বাঙালিদের স্বার্থে অবাঙালিদের আক্রমণ বজায় রেখেছে। সেই সঙ্গে নিশানা করেছে কেন্দ্রের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টিকে। গোবলয়ের দল বলে কটাক্ষ করে বারবার বিজেপিকে বাঙালি-বিরোধী বলে তোপ দেগেছে।

এখন ভিনরাজ্যে থাকা বাঙালিদের দুর্দশা যেন সেই তত্ত্বেই সিলমোহর দিচ্ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা কিংবা বাংলাদেশি তকমা দেওয়ার পেছনে কী রাজনীতি? বাংলাপক্ষকে কৌশলে বার্তা দিতে চাইছে গেরুয়া শিবির? এ বিষয়ে বাংলাপক্ষের সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি বলেন, “বাংলাপক্ষ মূল কথা নয়। তারা তো বাঙালি জাতি। বাংলাপক্ষের ওপর রাগ দেখিয়ে আমি বাঙালিকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পুরব, এটা আবার কী? বিজেপি বাঙালি বিদ্বেষী, বাঙালি বিরোধী হিসেবেই পরিচিত।”
স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেড এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, “দেশজুড়েই অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। কর্ণাটক বা তামিলনাড়ুর মতো অবিজেপি শাসিত রাজ্য থেকেও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।” তামিলনাড়ুতে বিজেপি খুব একটা ক্ষমতাবান নয়, তবে কর্ণাটকে বিজেপির ভালো প্রভাব রয়েছে। সেখানকার গেরুয়া নেতৃত্ব বাংলাপক্ষ সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
অন্যদিকে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার বা ওড়িশার ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। এই সব রাজ্যের বাসিন্দারা বাংলাপক্ষ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বাংলায় থাকা বিহার বা ওড়িশার বাসিন্দাদের বারবার নিশানা করেছে বাংলাপক্ষ। সাম্প্রতিক অতীতে ওড়িয়াদের কটাক্ষ করে একাধিক পোস্ট করেছেন বাংলাপক্ষের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায়। আর বিহার নিয়ে তো কথাই নেই। বিহারীদের প্রতি বাংলাপক্ষের শত্রুতা সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলায় বিহারীদের নানা জালিয়াতি ফাঁস করেছে বাংলাপক্ষ। তাদের দাবি, “পশ্চিমবঙ্গে অপরাধীদের বেশিরভাগই বিহারী।” অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের মাটি থেকে বিহারীদের বিতাড়িত করার কথা বাংলাপক্ষের অনেকেই বলেছেন। কটাক্ষ করে কেউ কেউ বলতেন, “পাটনার টিকিট ধরিয়ে দেব।”
সেসব কিছুই হয়নি। চোখে পড়ার মতো বিহারী বাংলা থেকে ফেরত যায়নি। কিন্তু ভিনরাজ্য থেকে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেককেই ফিরতে হচ্ছে। অনেককে বাংলাদেশেও পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে কৌশিক মাইতি বলেন, “অবাঙালিদের বাংলা ছাড়া করার কথা বাংলাপক্ষ কোনোদিন বলেনি। বাংলাকে বা বাঙালি নারীকে আক্রমণ করেছে কিংবা বাঙালিকে বাংলাদেশি বলেছে, তাদেরকে ক্ষমা চাওয়ানো ছাড়া বাংলাপক্ষ কিন্তু কারও গায়ে হাত তোলেনি।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাপক্ষ নিয়ম বদলের কথা বলে। ধর্মতলায় জনসমাবেশ করে ভূমিপুত্র সংরক্ষণ আইন চেয়েছে। আমরা আইন নিয়ে কাজ করতে চাই। পরিকাঠামোর বদল চাই। আজ দু’জনকে তাড়ালাম, কাল ৫০ জন চলে এল— এটা আমরা চাই না। আমরা অন্ধ্রপ্রদেশের মতো নিয়ম চাই।”