মুকুল-শুভেন্দুদের আমি চিহ্নিত করেছিলাম…আগামী দিনেও যদি দলের সঙ্গে কেউ বেইমানি করে…: অভিষেক
বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনা বহুদিন ধরেই চলছে। কিন্তু সেসব জল্পনার উত্তর দিয়ে দিলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের মেগা সমাবেশে দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমার গলা কেটে নিলেও, আমার গলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদই বেরোবে। আমি বেইমান নই’’।
বুধবার তৃণমূলের কর্মিসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সমালোচনা করতে গিয়ে একাধিক অভিযোগের মাধ্যমে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-র বিরুদ্ধে যে সব মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে, সেগুলো একেবারে মিথ্যা। বিজেপির কাছে সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স রয়েছে, সংবাদমাধ্যমের একাংশও তাদের পাশে। কিন্তু এত কিছুর পরও তারা কখনো আমাদের মতো একাধিক কর্মী তৈরি করতে পারেনি। আমরা বুকের রক্ত দিয়ে দলকে আগলে রাখব, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা’’।
এরপর, তিনি সিবিআইয়ের সমালোচনা করেন। ‘‘সিবিআই ভয় পেয়েছে। আমার নাম নিয়েছে, কিন্তু ঠিকানা-পরিচয় কিছু দেয়নি’’—এমনটাই বলেন অভিষেক। তিনি জানান, সিবিআই যেভাবে ভাববাচ্যেই কথা বলে, তেমনটা করছে। ‘‘বিজেপি এবং সিবিআই মিলে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, কিন্তু আমরা ভয় পাব না’’—এমন হুঁশিয়ারি দেন অভিষেক।
অভিষেক আরও বলেন, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২১৪টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। ২০২৬ সালে ২১৫টিরও বেশি আসন নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। বিজেপি বাংলায় কলুষিত পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল, কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের মোকাবিলা করেছে’’।
তিনি সন্দেশখালি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আরও বলেন, ‘‘এক বছর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি কী পরিস্থিতি ছিল, তা বাংলার মানুষ ভুলতে পারেনি। বিজেপি বাংলাকে কলুষিত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা করতে পারেনি। আজও সেই মানুষরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে’’।
তারপর তিনি তৃণমূলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘দলীয় স্তরে একতা বজায় রাখুন, আপনাদের গোষ্ঠীচেতনা বা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চিন্তা করবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলি মানুষের কাছে পৌঁছানোই আমাদের লক্ষ্য।’’
তিনি তৃণমূলের নেতাদের সতর্ক করে বলেন, ‘‘৭০-৭৫টি আসন যেগুলো বিজেপি জিতেছিল, তার মধ্যে ১০টি আসন এখন তৃণমূলের। যারা বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসেছে, তাদেরকে আমরা সম্মান জানাচ্ছি। নির্বাচনের পর সবাই একসঙ্গে কাজ করুন, বিভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হয়ে এগিয়ে চলুন।’’
এরপর তিনি আবারও তার দলের প্রতি বিশ্বস্ততার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘যারা আমাদের দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও যদি দলের সঙ্গে কেউ বেইমানি করে, তাকে আমরা ছাড়ব না’’।
এভাবে নেতাজি ইন্ডোরের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাঁর বক্তৃতা শুধু দলের কর্মীদের জন্যই ছিল না, বরং গোটা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি বার্তা ছিল, যা বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের শক্তি এবং একতার প্রমাণ রেখেছে।