কলকাতার বউবাজারের কলুটোলা এলাকায় আবারও তৃণমূলের (TMC) গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে, একদিকে শাসক দলের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে, অন্যদিকে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় ঘটে এই ঘটনাটি। তৃণমূলের হকার ইউনিয়নের নেতা শরিকের ওপর হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযোগ, বেআইনি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় মারধর এবং চপার দিয়ে কোপানো হয়।
শরিক, যিনি তৃণমূলের (TMC) হকার ইউনিয়নের নেতা হিসেবে পরিচিত, তিনি ফেসবুকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আয়েশা নাজের বেআইনি কার্যকলাপ নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। আর এই ভিডিওর কারণে তাকে একাধিকবার হুমকি ফোন আসতে থাকে বলে অভিযোগ করেছেন। এরপরই শনিবার সন্ধ্যায় ওই কাউন্সিলরের স্বামী ইরফান আলি ও তার অনুগামীরা শরিকের ওপর চড়াও হন। অভিযোগ, তারা রড দিয়ে শরিককে বেধড়ক মারধর করেন এবং চপার দিয়ে তাকে কোপান। হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় শরিক বলেন, ‘ওরা আমাকে ছাদে তুলে ফেলতে চেয়েছিল, যাতে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। আমি থানায় অভিযোগ করেছি।’ এর মানে, এই হামলার পেছনে পরিকল্পিত একটি ষড়যন্ত্র ছিল, যা অনেকটা স্বাভাবিক হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা রূপে পরিণত করতে চেয়েছিল। এদিকে, শরিকের বাবা জানিয়েছেন যে, তার ছেলেকে এই ভিডিওটি ডিলিট করতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। যদি না ডিলিট করা হয়, তবে তার ফল ভাল হবে না, এমনও বলা হয়েছিল।
অপরদিকে, ইরফান আলি, যার বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে, তিনি বলেন, ‘শরিক কিডন্যাপিংয়ের একটি মামলার অভিযুক্ত। সে পাড়ায় অশান্তি করছিল। পাড়ার লোকজনই তাকে পাকড়াও করেছিল। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম, কারণ আমি অসুস্থ। যখন আমি শুনলাম যে এমন কিছু ঘটেছে, তখন আমি থানায় ফোন করে জানাই এবং পুলিশকে ঘটনাস্থলে যেতে বলি।’
এ ঘটনাটি স্থানীয় পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করেছে। বউবাজার থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে আটক করে তল্লাশি শুরু করেছে। এলাকার মধ্যে এই ঘটনার পর তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
রাজনীতিবিদদের মতে, এই ধরনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা শুধুমাত্র শাসক দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ এবং অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে। কলকাতার মত একটি বড় শহরে এমন ঘটনায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাব সরাসরি জনজীবনে পড়ে। শরিকের ওপর হামলা, বেআইনি কার্যকলাপের প্রতিবাদ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার এসবই এই ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের এমন ঘটনা রাজ্য সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।