কলকাতা শহরের নিউ টাউনে ইনফোসিসের (Infosys) নতুন (new) ক্যাম্পাসের (campus) উদ্বোধন (inauguration) রাজ্যের প্রযুক্তি খাতে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী (chief minister) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন, যা শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের জন্য, বরং পুরো পূর্ব ভারতের প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই নতুন ক্যাম্পাস রাজ্যে ৪,০০০ (4-thousand) নতুন চাকরির (job) সুযোগ (opportunities) তৈরি করবে বলে ইনফোসিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যা যুব সমাজের জন্য এক নতুন আশা জাগিয়েছে।
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনফোসিস (Infosys) বর্তমানে বিশ্বের ৫৬টি দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। একসময় একটি ছোট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে এটি এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম আইটি এবং পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। সংস্থাটি সম্প্রতি তার এনার্জি এফিসিয়েন্সি এবং পুনর্নবীকরণ শক্তির ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে, যা তাদের পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এর সিইও জয়েশ সাঙ্ঘরাজকা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ইনফোসিস শুধুমাত্র প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নয়, বরং পরিবেশ ও সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও কাজ করছে।
এই ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে ৫০ একর জমির ওপর, যার একটি অংশে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাকি অংশেও ধীরে ধীরে কাজ শুরু হবে। রাজ্যের তরফ থেকে ইনফোসিসকে দেওয়া জমি এবং ক্যাম্পাসের বর্ধিত পরিধি ইনফোসিসের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশ, যা রাজ্যের আইটি খাতের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “এটা বাংলার জন্য গর্বের বিষয়। এক সময় আমরা দেখেছিলাম, কলকাতার আইটি সেক্টর প্রায় শূন্য ছিল। আজ, ইনফোসিসের মতো বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান এখানে এসে আমাদের রাজ্যকে বিশ্বমানে তুলে ধরছে।”
রাজ্যের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নতি:
কলকাতায় ইনফোসিসের (Infosys) নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন, রাজ্যে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, এমনকি এটি সারা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। ৪,০০০ নতুন চাকরি সংস্থাটি তৈরি করবে, যার মধ্যে অনেকগুলি হবে প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল সেক্টরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। পশ্চিমবঙ্গের সরকার নিশ্চিত করেছে যে, এই ক্যাম্পাসের মাধ্যমে রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে, এবং তরুণরা এক্সপোজার পাবে বিশ্বমানের প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে কাজ করার।
রাজ্যের বর্তমান তরুণদের জন্য এটি একটি বিপ্লবী ঘটনা, কারণ ইনফোসিসের মতো বড় সংস্থা তাদের চাকরির বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ দেবে। শুধু কলকাতা শহরেই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলেও আইটি সেক্টরকে উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ সহায়ক হবে। এই নতুন ক্যাম্পাসের মাধ্যমে শুধু নতুন চাকরি নয়, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার উন্নয়নেও বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটাবে।
কলকাতায় প্রযুক্তি সংস্থার আগমন এবং রাজ্যের আইটি খাতের উন্নতি:
রাজ্যে ইনফোসিসের (Infosys) ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হওয়া, পশ্চিমবঙ্গের আইটি খাতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। এর আগে কলকাতায় অনেক প্রযুক্তি সংস্থা যেমন ডেলয়েট, স্যাপ, এবং সিজিএল (CGL) তাদের শাখা খুলেছে, কিন্তু ইনফোসিসের এই ক্যাম্পাস সত্যিই একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া একদিকে যেমন রাজ্য সরকারের সক্ষমতা এবং উদ্যোগের প্রকাশ, তেমনি অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আইটি সংস্থাগুলির রাজ্যে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রমাণও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা এখন দেশে আইটি সেক্টরে এক নম্বরে আছি। একসময় যেটি সম্ভব ছিল না, এখন সেটি সম্ভব হয়েছে। আজ রাজ্যে আইটি সংস্থাগুলোর জন্য একটা নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে, আর এই প্ল্যাটফর্মকে আরও বিস্তৃত করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “এটা বাংলার জন্য গর্বের মুহূর্ত, কেননা আমরা বিশ্বমানের আইটি সংস্থাগুলোর জন্য আরও নতুন সুযোগ তৈরি করছি। আমাদের সরকারের লক্ষ্য একটাই, রাজ্যকে সারা বিশ্বের প্রযুক্তি হাবে পরিণত করা।”
এছাড়াও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার সেমি কন্ডাকটার ফেসিলিটি তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছেন, যা রাজ্যের প্রযুক্তি খাতের পরবর্তী স্তরের প্রসারণ ঘটাবে। সেমি কন্ডাকটার প্রকল্পটি উচ্চমানের প্রযুক্তি তৈরির জন্য অপরিহার্য হবে, এবং এটি ভারতের বৃহত্তম প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি হতে পারে।
বিশ্বমানের কর্মী তৈরি এবং গ্লোবাল প্যালেটের জন্য প্রস্তুতি:
ইনফোসিস (Infosys) শুধু কলকাতার প্রযুক্তি খাতের উন্নতির জন্য কাজ করবে না, বরং এটি রাজ্যের তরুণদেরকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক কর্মী হিসেবে গড়ে তুলবে। রাজ্যে প্রতিনিয়ত দক্ষ প্রযুক্তি কর্মী তৈরির জন্য কর্মশালা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এবং বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তরুণদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে, যা তাদের কর্মসংস্থান এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করবে।
এছাড়া, ইনফোসিসের এই ক্যাম্পাসের মাধ্যমে কলকাতা শহরটি আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্য আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে, আরও প্রযুক্তি সংস্থা কলকাতায় শাখা স্থাপন করবে, যা আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং কলকাতাকে প্রযুক্তির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
পরিবেশ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা:
ইনফোসিস (Infosys) শুধু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নয়, পরিবেশের সুরক্ষায়ও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সংস্থাটি তাদের ব্যবসার সঙ্গে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করছে এবং পুনর্নবীকরণ শক্তি ব্যবহারে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জয়েশ সাঙ্ঘরাজকা, ইনফোসিসের সিইও, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, “আমরা শুধু প্রযুক্তি খাতে নয়, বরং আমাদের পরিবেশের সুরক্ষায়ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এনার্জি এফিসিয়েন্সি এবং পুনর্নবীকরণ শক্তির ব্যবহার আমাদের মূল অগ্রাধিকার।”
এছাড়া, ইনফোসিসের সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সামাজিক উন্নতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা হচ্ছে। এর ফলে, শুধু প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই নয়, সমাজের অন্য খাতেও ইনফোসিস ভূমিকা রাখছে, যা ভবিষ্যতে আরও সুনাম অর্জন করতে সাহায্য করবে।
কলকাতায় ইনফোসিসের (Infosys) নতুন ক্যাম্পাস রাজ্যের প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সামাজিক খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এটি শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে না, বরং রাজ্যকে বিশ্বমানের প্রযুক্তি হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। রাজ্য সরকার এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ও অর্থনৈতিক খাতের উন্নতির জন্য যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন উদ্যোগ রাজ্যে আসবে, যা যুবক প্রজন্মের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। ইনফোসিসের এই পদক্ষেপটি রাজ্যের প্রযুক্তি খাতে আরও একটি বড় মাইলফলক।