দায়িত্ব না পেয়ে দিল্লিমুখী লকেট চট্টোপাধ্যায়, জল্পনা বাড়ছে

বঙ্গ বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি আরও প্রকট হয়ে উঠছে। রাজ্যের দুই সেলিব্রিটি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee) ও ভারতী ঘোষকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে…

দায়িত্ব না পেয়ে দিল্লিমুখী লকেট চট্টোপাধ্যায়, জল্পনা বাড়ছে

বঙ্গ বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি আরও প্রকট হয়ে উঠছে। রাজ্যের দুই সেলিব্রিটি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee) ও ভারতী ঘোষকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে জল্পনা তুঙ্গে। সম্প্রতি দমদমে প্রধানমন্ত্রীর সভায় দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা সত্ত্বেও আমন্ত্রণ পাননি লকেট। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি সরাসরি দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভার মঞ্চে কারা ছিলেন এবং কে কে বক্তৃতা দিয়েছেন, তার বিস্তারিত তথ্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের (পিএমও) তরফে জানতে চাওয়া হয়। এরপরই বঙ্গ বিজেপির তরফে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পিএমওতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। দলীয় সূত্রের একাংশের মতে, রাজ্যে দায়িত্ব না পেয়ে লকেট দিল্লিমুখী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীতে দুর্গাপুজো আয়োজনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। দিল্লি প্রদেশ বিজেপি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবা ও বিভিন্ন পুজো কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এমনকি দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি. কে. সাক্সেনার সঙ্গেও দেখা করেছেন। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে দিল্লিতে দুর্গাপুজো আয়োজনের বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। সেই কাজেই ব্যস্ত রয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ কর্মসূচিতেও তিনি অংশ নেবেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যে সুযোগ না পেয়ে কি তিনি দিল্লিতে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করছেন?

   

লকেট চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি প্রাক্তন আইপিএস ও বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষকেও রাজ্য রাজনীতির কর্মসূচি থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন ভারতী। তিনি লিখেছিলেন, কোনও অদৃশ্য হাত তাঁর বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং তাঁকে পরিকল্পিতভাবে দলীয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।

Advertisements

এই দুই নেত্রীর পাশাপাশি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির প্রাক্তন মহিলা মোর্চা সভানেত্রী দ্বিতীয়া কৌরও। বর্তমানে তিনি জেলা বিজেপির এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দ্বিতীয়ার বক্তব্য, “১০ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে সংগঠন করেছি। দল ভরসা করে দায়িত্ব দিয়েছে, আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। কিন্তু এখন আমার অক্ষমতার কারণে সংগঠনের বড় দায়িত্ব নিতে পারব না। আমি রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। সাধারণ কর্মী হিসেবেই কাজ চালিয়ে যাব।” দ্বিতীয়ার এই পোস্টের সঙ্গে তিনি রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাকে ট্যাগও করেছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদ না পাওয়ার কারণেই এই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

এই ঘটনাগুলি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব সংকট আরও গভীর হচ্ছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেত্রীদের ব্রাত্য রেখে দলীয় সংগঠন চালানোর কৌশল রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন জল্পনা তৈরি করেছে। রাজ্য বিজেপির একাংশ মনে করছে, এই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বিরোধী শিবিরকে শক্তিশালী করছে এবং সংগঠনের ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।