মমতার ডাকেই ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শিবির, নির্বাচন কমিশনের সামনে কর্মসূচি আগামী সপ্তাহে

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ফের একসঙ্গে পথে নামছে বিরোধীরা। এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রস্তাবেই ঘেরাও করা হবে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর। যে প্রস্তাব একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ঘোষণা…

Mamata warnes BJP

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ফের একসঙ্গে পথে নামছে বিরোধীরা। এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রস্তাবেই ঘেরাও করা হবে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর। যে প্রস্তাব একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এবার সেই পথেই হাঁটছে গোটা ইন্ডিয়া জোট। বৃহস্পতিবার সংসদে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, এনসিপি, সিপিআই(এম), সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি সহ সমস্ত শরিক দলের প্রতিনিধিরা। এই বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব তোলেন নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাওয়ের।

সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে ইন্ডিয়া জোট। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামী সপ্তাহের বুধবার বা বৃহস্পতিবার, দিল্লিতে কমিশনের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন বিরোধী সাংসদরা। কমিশনের ‘এসআইআর’ (SIR) বা ‘Special Intensive Revision’ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেই এই আন্দোলনের সিদ্ধান্ত।

   

এসআইআর-এর নামে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা থেকে বিরোধীদের সমর্থক বহু মানুষের নাম চুপিসারে বাদ দিচ্ছে— এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই বলেছেন, “এসআইআর মানে সাইলেন্ট ইনভিসিবল রিগিং।” অর্থাৎ, গোপনে ভোটার তালিকা থেকে বিরোধী দলের সমর্থকদের নাম বাদ দিয়ে বিজেপির পক্ষে ভোটের মেরুকরণ ঘটানোর চেষ্টা করছে কমিশন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এবার সরব হচ্ছে গোটা ইন্ডিয়া জোট।

এই বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। তৈরি হয়েছে পোস্টার, যেখানে বড় করে লেখা রয়েছে “Silent Invisible Rigging-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন”— এর নিচে তৃণমূলের লোগো থাকলেও, পাশাপাশি লেখা রয়েছে “INDIA Alliance”, অর্থাৎ বোঝানো হয়েছে, এটি যৌথ কর্মসূচি। দলীয় সূত্রে খবর, এই পোস্টারগুলি শুধু তৃণমূল নয়, অন্যান্য শরিক দলগুলিও ব্যবহার করবে নিজেদের মতো করে।

তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছে, এটা শুধু কোনও একটি রাজ্যের সমস্যা নয়। দেশের একাধিক রাজ্যে একইভাবে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। তাই শুধু বাংলার সমস্যা বলে দায় এড়ানো যাবে না। সংসদের মধ্যে এবং বাইরে, দুটি স্তরেই এই ইস্যুতে সরব হচ্ছে বিরোধী দলগুলি। বিক্ষোভের দিন ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা একসঙ্গে কমিশনের দপ্তরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন, অবস্থান বিক্ষোভেও বসবেন।

Advertisements

রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া জোটকে আরও সংঘবদ্ধ করে তুলতেই এই ধরনের কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। একদিকে যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তেমনই বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অসন্তোষকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরার চেষ্টা করছে ইন্ডিয়া জোট।

তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়— এই অভিযোগ বহুবার উঠেছে। কিন্তু এবার আমরা হাতে-নাতে প্রমাণ পেয়ে গিয়েছি যে এসআইআর-এর মাধ্যমে গণতন্ত্রে ছিদ্র তৈরি হচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব, সেই ছিদ্র বন্ধ করা।”

সবমিলিয়ে, আগামী সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের সামনে বিরোধী সাংসদদের অবস্থান বিক্ষোভ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ যে চড়বে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। এবং এই আন্দোলনের নেপথ্যে থাকছে যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব, তা একদিকে যেমন তাঁকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে, তেমনই রাজ্যের রাজনীতিতেও তা তৃণমূলকে শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে।