হাওড়া (Howarh) শহরের ভাগাড় এলাকায় বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলের মাটির নিচে মিথেন গ্যাসের সংমিশ্রণ ঘটছে এবং গঙ্গার জলও এতে মিশছে, যা এক ভয়াবহ বিপদের সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, এই গ্যাসের উপরের তলা ফেঁপে ওঠা এবং নদীর জল মিশে যাওয়ার কারণে এলাকায় বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে। যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে গোটা এলাকাটি ধসে যেতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার হাওড়ার (Howarh) বেলগাছিয়া ভাগাড়ে আচমকাই এক বড় ধস নামে। যার ফলে শিবপুর এবং উত্তর হাওড়া কেন্দ্রীয় জল সরবরাহের প্রধান পাইপলাইন ফেটে যায়। ফলে চরম সমস্যার মুখে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। একদিকে যেমন জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি অন্যদিকে মাটি ফেটে রাস্তায় বড় বড় ফাটল তৈরি হয়। এমনকি অনেক বাড়ির ভিতরেও ফাটল পড়ে, যা এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তড়িঘড়ি করে তাদের আশেপাশের স্কুলগুলোতে আশ্রয় দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর থেকেই ভূ-বিজ্ঞানীরা আরও গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করেন এবং সেখান থেকে উঠে আসে এক নতুন বিপদের কথা। জানা যায়, মাটির নিচে জমে থাকা আবর্জনা ও পশু-পাখির মৃতদেহের গলিত রসের কারণে মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই আবর্জনা জমে থাকায় মাটির শোষণ ক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে, ফলে মাটি ফেঁপে গিয়েছে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, যখন মাটির তলায় ফাঁকা স্থান তৈরি হয়, তখন মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হতে থাকে।
তবে এতদিনের পরিস্থিতি ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু গঙ্গার জল মিশে যাওয়া নতুন বিপদ সৃষ্টি করেছে। নদী থেকে জল এসে মিথেন গ্যাসের সঙ্গে মিশে এক বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করছে, যা যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। গঙ্গার জল এবং মিথেন গ্যাসের সংমিশ্রণ প্রায়শই অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে, মিথেন গ্যাস প্রচুর পরিমাণে জমা হলে সেটি দ্রুত বিস্ফোরিত হতে পারে। এতে গোটা এলাকাটি ধসে পড়ে ভয়াবহ বিপদে পড়তে পারে।
এই অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় এবং গ্যাসটি বের করার উপযুক্ত পদ্ধতি গ্রহণ করা না হয়, তবে গোটা এলাকাটি ধসে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এমনকি আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদেরও জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হতে পারে।
এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং বিজ্ঞানীরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, এই অঞ্চলে দ্রুত মিথেন গ্যাস বের করার পদ্ধতি শুরু করা উচিত এবং মাটি শক্ত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যা গোটা হাওড়া শহরকেই বিপদের মধ্যে ফেলবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সচেতন থাকতে বলা হয়েছে এবং তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু মানুষ আশেপাশের স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। তবে একান্ত জরুরি যে, এই সমস্যার সমাধান অবিলম্বে করা না হলে এক অস্বাভাবিক বিপদ তৈরি হতে পারে।
গঙ্গার জল ও মিথেন গ্যাসের মিশ্রণ একটি অতি বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মিথেন গ্যাস বাতাসে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং যদি তা কোনো প্রকার আগুনের সংস্পর্শে আসে, তা হলে তা একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এই বিপদটি আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে কারণ মিথেন গ্যাস উড়ে এসে যদি স্থানীয় পরিবেশে প্রবাহিত হয়, তবে তা এক ধ্বংসাত্মক ঘটনার কারণ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। ধসে যাওয়া এলাকাগুলির মাটি পরীক্ষা করে দেখার পাশাপাশি মিথেন গ্যাস নিষ্কাশনের কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। একদিকে যেমন হাওড়া শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন, তেমনই গঙ্গার জল মিথেন গ্যাসের সঙ্গে মিশে আরও বড় বিপদের কারণ না হয়ে উঠুক, সেদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।