নবান্ন অভিযানের আগে হাওড়ায় যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি, পুলিশের কড়া ব্যবস্থা

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সোমবার (২৮ জুলাই) ‘নবান্ন অভিযান’-এর ডাক দেওয়া হয়েছে একাধিক সংগঠনের তরফে। যদিও আদালতের তরফে এই জমায়েতকে ‘অনুমোদনহীন’ বলে জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা…

jobless teachers Nabanna protest

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সোমবার (২৮ জুলাই) ‘নবান্ন অভিযান’-এর ডাক দেওয়া হয়েছে একাধিক সংগঠনের তরফে। যদিও আদালতের তরফে এই জমায়েতকে ‘অনুমোদনহীন’ বলে জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হাওড়ার মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ী সংগঠনের করা মামলার ভিত্তিতে আদালতের এই রায় আসে। এদিকে হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও ধরনের জমায়েত কিংবা মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

তবু তা উপেক্ষা করেই নবান্ন অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় আন্দোলনকারী সংগঠনগুলি। পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্য মঞ্চ, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ, সরকারি কর্মচারী পরিসর পশ্চিমবঙ্গ এবং আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার সকাল থেকেই তাঁরা হাওড়া স্টেশন চত্বরে জমায়েত করবেন এবং সেখান থেকে মিছিল শুরু করে গ্র্যান্ড ফরশোর রোড ধরে নবান্ন অভিমুখে যাত্রা করবেন।

   

তবে মিছিলের পথে প্রশাসনিক কড়াকড়ির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, হাওড়া সিটি পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বসানো হয়েছে লোহার গেট, বাড়ানো হয়েছে ব্যারিকেড, মোতায়েন করা হচ্ছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। এমনকি গোটা পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালাতে ড্রোনও ব্যবহার করা হবে বলে জানা গিয়েছে।

সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের রাজ্য আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করব। পুলিশ যদি আমাদের নবান্নে যেতে বাধা দেয়, তাহলে আমরা যেখানে আটকে দেওয়া হবে সেখানেই বসে অবস্থান বিক্ষোভ করব। আমাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী ও সরকারি কর্মচারীরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। সেই প্রতিবাদেই আমরা রাস্তায় নামছি।”

আন্দোলনকারীদের দাবি, রাজ্য সরকার গত কয়েক বছরে বহু ক্ষেত্রে নিয়োগ বন্ধ রেখেছে, আবার কোথাও কোথাও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা চাকরি পাননি। এমনকি স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি), প্রাথমিক টেট, উচ্চ প্রাথমিক এবং গ্রুপ ডি/সি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের নীরব ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই অভিযান।

Advertisements

যদিও প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনওরকম জমায়েত বা বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। হাওড়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ পিকেট। নজরদারি চালানো হবে সিসিটিভি ও ড্রোনের মাধ্যমে। প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারও করা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

তবে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানানো সাংবিধানিক অধিকার। সরকারের বঞ্চনা ও অবহেলার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানানোতেই তাঁদের এই উদ্যোগ।

এখন দেখার বিষয়, সোমবার সকালে আদৌ সংগঠনের কর্মীরা হাওড়া স্টেশনে জমায়েত করতে পারেন কিনা, অথবা সেখানে পুলিশের সঙ্গে কোনও সংঘর্ষ হয় কি না। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, সেটাই নজরে সকলের। তবে আপাতত প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে এক রকম চাপা সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।