৪০ বছর পর হাওড়া ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বন্ধ যান চলাচল

কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতুর Howrah Bridge) স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রায় চার দশক পর নেওয়া হল বড় পদক্ষেপ। আগামীকাল, শনিবার (১৬…

A view of the Howrah Bridge at night, with the bridge fully illuminated and reflecting off the water below. The bridge is closed to traffic, with workers performing a health check on the structure. The scene is peaceful and quiet, with the only sounds coming from the water below and the workers on the bridge

কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতুর Howrah Bridge) স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রায় চার দশক পর নেওয়া হল বড় পদক্ষেপ। আগামীকাল, শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাত ১১:৩০ থেকে রবিবার (১৭ নভেম্বর) ভোর ৪:৩০ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্রিজটি যান চলাচলের জন্য বন্ধ রাখা হবে। এই পরীক্ষা কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর (এসএমপি) কর্তৃক পরিচালিত হবে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা
রবীন্দ্র সেতু মূলত একটি ঝুলন্ত লোহার কাঠামো, যা স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, লোহার কাঠামো এবং স্তম্ভগুলি কেমন অবস্থায় রয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা হবে। লোহার প্রতিটি অংশ, কাঠামোর কোণা এবং সংযোগস্থল খুঁটিয়ে দেখা হবে যাতে সময়মতো ক্ষয়ক্ষতির কোনও সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা যায়।

   

এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে, ব্রিজটি আগের মতোই মজবুত এবং সুরক্ষিত রয়েছে কিনা। এটি ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবার করা হচ্ছে। এর আগে, ২০০৪ সালে বিটুমিনাস স্ক্র্যাপিংয়ের কাজের সময় ব্রিজের উপরের অংশ কিছুটা পর্যালোচনা করা হয়েছিল।

হাওড়া ব্রিজের ইতিহাস
হাওড়া ব্রিজ, যা রবীন্দ্র সেতু নামেও পরিচিত, ১৯৪৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর নির্মাণ শুরু হয় ১৯৩৭ সালে এবং শেষ হয় ১৯৪৩ সালে। এই ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা প্রথম করা হয়েছিল ১৯২৬ সালে, আর এন মুখোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে।

ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৪০৫ মিটার এবং প্রস্থ ২১.৬ মিটার। এর গোটা কাঠামোটি সম্পূর্ণ লোহার তৈরি। বিশেষ বিষয় হল, ব্রিজ তৈরির জন্য ব্যবহৃত লোহা মূলত দেশের মধ্যেই উৎপাদিত হয়েছিল। এটি বিশ্বে সবচেয়ে ব্যস্ত ক্যান্টিলিভার সেতুগুলির মধ্যে অন্যতম।

যান চলাচলের প্রভাব
বন্দরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ১,৫০,০০০ পথচারী এবং ১ লক্ষ যানবাহন হাওড়া ব্রিজ ব্যবহার করে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে এই ব্রিজে যান চলাচল সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রতি মিনিটে প্রায় ৫৫০টি গাড়ি এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করে।

এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার কারণে রাতের নির্ধারিত সময়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে প্রশাসনের তরফে বিকল্প রুটের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে নিত্যযাত্রীদের সমস্যা না হয়।

কেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ?
দীর্ঘদিনের ব্যবহারে ব্রিজের কাঠামোর বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভারী যানবাহনের চাপে এবং প্রতিদিনের অপব্যবহার লোহার কাঠামোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অতএব, স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সেতুর স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোনও বড় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

এছাড়া, হাওড়া ব্রিজ একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং কলকাতা ও হাওড়ার সংযোগস্থল হিসেবে পরিচিত। এর রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধুমাত্র একটি সেতু নয়, বরং একটি জাতীয় ঐতিহ্য।

ব্রিজ বন্ধের সময়সূচি
সময়: শনিবার রাত ১১:৩০ থেকে রবিবার ভোর ৪:৩০
প্রভাবিত যানবাহন: সমস্ত প্রকারের যানবাহন (দুই দিকেই বন্ধ থাকবে)
পরিকল্পনা: বিকল্প রুট ব্যবহার করার জন্য নোটিস জারি করেছে কর্তৃপক্ষ

ঐতিহাসিক গুরুত্ব বজায় রাখার দায়িত্ব
হাওড়া ব্রিজ কেবলমাত্র কলকাতার নয়, ভারতের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই ব্রিজ আজও দেশের প্রযুক্তিগত এবং স্থাপত্য শিল্পের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এর স্বাস্থ্য পরীক্ষা তাই শুধু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নয়, বরং ঐতিহ্যের গুরুত্ব বজায় রাখারও একটি পদক্ষেপ।
আগামীকাল, শনিবার রাতের কাজ সঠিকভাবে শেষ হলে এই ব্রিজ আগামী কয়েক দশক নিরাপদে ব্যবহার করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।