হুগলি নদীর ভাঙনের কোপ নিমতলা শ্মশানে, বন্দরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক মেয়র ফিরহাদের

হুগলি নদীর (Hoogly River) অব্যাহত ভাঙনে (Erosion) বিপদে পড়েছে কলকাতার ঐতিহাসিক নিমতলা (Nimtala) শ্মশান (Crematorium)। এই শ্মশানটি শুধু শহরের জন্য নয়, কলকাতা (kolkata) লাগোয়া জেলা…

Hoogly River Erosion Nimtala

হুগলি নদীর (Hoogly River) অব্যাহত ভাঙনে (Erosion) বিপদে পড়েছে কলকাতার ঐতিহাসিক নিমতলা (Nimtala) শ্মশান (Crematorium)। এই শ্মশানটি শুধু শহরের জন্য নয়, কলকাতা (kolkata) লাগোয়া জেলা থেকেও অনেক মানুষ এখানে দাহকর্মের জন্য আসেন। তবে, নদীভাঙনের কারণে নিমতলা শ্মশান বর্তমানে একটি বড় বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা মায়ের ঘাটের পাম্পিং স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়ও। এই অঞ্চলের ভাঙন প্রতিদিনই আরও তীব্র হচ্ছে এবং তলার মাটি নদীর গর্ভে মিশে যাচ্ছে, যা একদিন বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

এই পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার কলকাতা পুরসভার মেয়র (Mayor) ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) বন্দরের কর্তাদের (Port Authority) সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে মেয়র সংশ্লিষ্ট কর্তাদের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান এবং নিমতলা শ্মশান ও মায়ের ঘাটের এলাকার পুনঃসংস্কারের কাজ শুরু করার জন্য অনুরোধ করেন।

   

নিমতলা শ্মশানের গুরুত্ব ও বিপদঃ
নিমতলা (Nimtala) শ্মশান কলকাতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। এখানে দৈনিক অসংখ্য মৃতদেহ দাহ করা হয়। বৈদ্যুতিক ও কাঠের চুল্লিতে দাহ করার জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে আসেন। যদি গঙ্গার ভাঙনে এই শ্মশান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তার প্রভাব শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং কলকাতা ও তার আশপাশের জেলা গুলিতেও ব্যাপক ক্ষতি হবে। এই পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতা (kolkata) পুরসভার কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তিত। তারা জানিয়ে দিয়েছেন যে, যদি এই ভাঙন বন্ধ না করা যায়, তবে সামাজিক ও ধর্মীয় দিক থেকে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

মায়ের ঘাটের পাম্পিং স্টেশন ও জল সরবরাহের সংকটঃ
হুগলি নদীর অপর পাড়ে মায়ের ঘাট পাম্পিং স্টেশনও একই ধরনের বিপদে পড়েছে। মায়ের ঘাট থেকে কলকাতার (kolkata) উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বের কয়েকটি ওয়ার্ডে জল সরবরাহ করা হয়। যদি এই অঞ্চলের পাম্পিং স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে কলকাতার অনেক এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে শহরের হাজার হাজার মানুষ পানীয় জল নিয়ে সমস্যায় পড়বেন। পুরসভা এই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে।

মেয়র ফিরহাদ হাকিমের প্রতিশ্রুতিঃ
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আজ পোর্টের আধিকারিকদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই নিমতলা এবং মায়ের ঘাটের এলাকায় আমূল সংস্কারের কাজ শুরু হবে। পোর্ট কর্তৃপক্ষ এই কাজের জন্য প্রজেক্ট ডিটেল রিপোর্ট তৈরি করতে শুরু করেছে।” তিনি আরও বলেন, এই সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু না হলে দুই এলাকাতেই বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে, যা সমগ্র শহরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

পোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অন্যান্য আলোচনাঃ
বৈঠকে শুধু নদীভাঙন রোধের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, কলকাতা (kolkata) শহরের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন। পোর্টের আধিকারিকরা কলকাতা পুরসভাকে জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই নিকাশি পথ থেকে পলি উত্তোলন (ডিসিল্টিং) কাজ শুরু হবে। এই কাজ শুরু হলে কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা আরও কার্যকরী হবে এবং বৃষ্টির জল বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

এছাড়া, মিলেনিয়াম পার্কের লিজ রিনিউ, পোর্ট তল্লাটে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা মানুষদের জন্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণ এবং মল্লিকঘাট ফুল বাজারের সংস্কারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। পোর্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, খুব শীঘ্রই এসব কাজ শুরু হবে, যাতে শহরের উন্নয়ন এবং পরিষেবার মান বাড়ানো যায়।

পোর্ট কর্তৃপক্ষের বড় পরিকল্পনাঃ
এদিকে, পোর্ট কর্তৃপক্ষ (Port Authority) জানিয়েছে, তারা হুগলি নদীর দু’ধারের ঘাট সুন্দর করে সাজানোর জন্য একটি বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বাগবাজার থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত নদীর ঘাটগুলো সংস্কার করে তা নতুন করে সাজানো হবে, যাতে নদীর পাড়ে মানুষের চলাচল আরও সুবিধাজনক হয় এবং নদীর সৌন্দর্য বাড়ানো যায়।

হুগলি নদীর (Hoogly River) ভাঙনের কারণে কলকাতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন নিমতলা শ্মশান (Nimtala Crematorium) এবং মায়ের ঘাটের পাম্পিং স্টেশন বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। তবে, মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে কলকাতা পুরসভা ও পোর্ট কর্তৃপক্ষ (Port Authority) দ্রুত এই সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ শুরু করেছে। দুই অঞ্চলের পুনঃসংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই প্রজেক্ট ডিটেল রিপোর্ট তৈরি করা শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া, কলকাতার (kolkata) নিকাশি ব্যবস্থা এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নও একসঙ্গে চলবে। এই উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে শহরের একাধিক সমস্যা সমাধান হবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য পরিষেবা আরো উন্নত হবে।