ফের মঙ্গলবার রাতে ভাসতে পারে কলকাতার বেশ কিছু এলাকা

কলকাতা: সোমবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে কলকাতা কার্যত জলমগ্ন (Kolkata flood)। এক রাতেই রেকর্ড ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি নামায় শহরের রাস্তাঘাট নদীর চেহারা নিয়েছে। নাগরিকদের দুর্ভোগ সীমাহীন,…

কলকাতা: সোমবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে কলকাতা কার্যত জলমগ্ন (Kolkata flood)। এক রাতেই রেকর্ড ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি নামায় শহরের রাস্তাঘাট নদীর চেহারা নিয়েছে। নাগরিকদের দুর্ভোগ সীমাহীন, বহু পরিবার বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হওয়ার আগেই নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে গঙ্গার জোয়ারকে ঘিরে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ২টা ২৩ মিনিট নাগাদ গঙ্গার জলস্তর হঠাৎ বেড়ে ৫.৫৭ মিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। গঙ্গার ধার ঘেঁষে থাকা লকগেটগুলি রাত সাড়ে বারোটা থেকে ভোর সাড়ে চারটে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এর ফলে শহরের জমে থাকা জল আরও নামানো যাবে না এবং ব্যাক ফ্লো হয়ে ফের শহরে জল ঢুকতে পারে।

   

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, প্রশাসন সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছে। তবে তাঁর কথায়, “প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। কলকাতার পাইপলাইন ঘণ্টায় ২০ মিমি জল নামাতে সক্ষম। কিন্তু যখন এক রাতে ৩০০ মিমি বৃষ্টি হয়, তখন তা সামলানো কোনওভাবেই সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “গঙ্গার জল ফুলে উঠেছে। ফলে খাল, ক্যানেল, ড্রেন সব ভর্তি। আমরা জল ফেলতে গেলেই তা ফের ব্যাক ফ্লো হয়ে শহরে ফিরে আসছে। দুপুরের বান কাটলেই তবেই জল নামানো সম্ভব হবে।”

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গড়িয়া অঞ্চল। বিশেষ করে পুরসভার ১০৮ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে সেখানকার বাসিন্দারা নাজেহাল। এছাড়াও শহরের একাধিক জায়গায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর এসেছে। মেয়র নাগরিকদের অযথা বাইরে বেরোতে মানা করেছেন। তাঁর সতর্কবার্তা, “বিদ্যুতের খুঁটি বা তার প্রাণঘাতী হতে পারে।”

Advertisements

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, শুধু বৃষ্টিই নয়, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ জল গঙ্গায় নামছে। তাঁর অভিযোগ, ফরাক্কা ব্যারেজে কেন্দ্রীয় সরকার ড্রেজিং না করায় নদীর জলস্তর আরও বেড়ে গেছে। এর ফলেই কলকাতার জমা জল গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাতের জোয়ারের সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এখনও সব জায়গা থেকে জল নামেনি। যদি ফের বৃষ্টি হয় এবং জোয়ারের প্রভাব পড়ে, তাহলে শহরের বড় অংশ আবারও ডুবে যেতে পারে।”

এই পরিস্থিতিতে নাগরিক জীবনে নাজেহাল অবস্থা। স্কুল-কলেজে আগাম ছুটি ঘোষণা হয়েছে। বহু অফিস কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। গণপরিবহণও কার্যত ভেঙে পড়েছে। মেট্রো পরিষেবা আংশিকভাবে চালু থাকলেও জলমগ্ন রাস্তায় বাস বা ট্যাক্সি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের পর থেকে বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমলেও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে। তবে ভারী জোয়ারের কারণে ফের জল বিপর্যয় হতে পারে কলকাতায়। কলকাতাবাসীর রাত কাটবে নতুন করে উদ্বেগে—গঙ্গার জোয়ারের জেরে ফের শহর ডুবতে পারে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News