West Bengal Weather: পশ্চিমবঙ্গে আগামী কয়েক দিন ঝড়-বৃষ্টির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত একটি নিম্নচাপ এবং উত্তর বাংলাদেশের উপরে অবস্থিত একটি ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দুটি আবহাওয়া সিস্টেম ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করছে এবং এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ ও তার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে ৫০-৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া এবং বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয় জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
West Bengal Weather: দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির প্রভাব
আজ, ৩ মে, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলাগুলিতে বৃষ্টির তীব্রতা বেশি হতে পারে। এই জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও, দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় হাওয়ার গতিবেগ ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার মধ্যে থাকবে এবং হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করে দিয়েছে যে, বজ্রবিদ্যুতের সময় বাইরে থাকা এড়িয়ে চলা উচিত এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া প্রয়োজন।
৪ মে দক্ষিণবঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ কিছুটা কমে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় নেমে আসবে। এই দিনে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়া দপ্তরের মতে, নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া
উত্তর বাংলাদেশে অবস্থিত ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি থাকতে পারে, তাই স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও সতর্কতা
এই ঝড়-বৃষ্টির কারণে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় জনজীবনে প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, গাছ উপড়ে পড়া এবং রাস্তায় জল জমার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের তাদের ফসল সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, কারণ উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়ার প্রভাব বেশি হতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের আঞ্চলিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে এবং আবহাওয়ার আপডেট অনুসরণ করতে বলা হচ্ছে।”
জনসাধারণের জন্য পরামর্শ
আবহাওয়া দপ্তর জনসাধারণকে বজ্রপাতের সময় গাছের নীচে বা খোলা জায়গায় আশ্রয় না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বাড়ির বাইরে থাকা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো সুরক্ষিত করা এবং জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। কলকাতা সহ শহরাঞ্চলে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিষ্কার রাখার জন্য পৌরসংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জরুরি পরিষেবাগুলো প্রস্তুত রেখেছে এবং জনসাধারণকে আবহাওয়া দপ্তরের ওয়েবসাইট (www.imd.gov.in) এবং অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে নিয়মিত আপডেট নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে আগামী কয়েক দিন ঝড়-বৃষ্টির আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তীব্র ঝোড়ো হাওয়া এবং বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে হবে। উত্তরবঙ্গেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনসাধারণের সমন্বিত প্রচেষ্টা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে। আবহাওয়ার আপডেট নিয়মিত অনুসরণ করে এবং সতর্কতা অবলম্বন করে এই প্রাকৃতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।


