উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক ইস্তফা ঘিরে যখন রাজনৈতিক মহলে তীব্র চর্চা শুরু হয়েছে, তখন একাধিক ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও ধনখড় তাঁর পদত্যাগের কারণ হিসেবে ‘শারীরিক অসুস্থতা’-র কথা উল্লেখ করেছেন, রাজনৈতিক মহলে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। এই আবহে, মঙ্গলবার সকালে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে ধনখড়ের প্রশংসা করে বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি-সহ নানা পদে দেশ সেবার একাধিকবার সুযোগ পেয়েছেন। আমি আশা রাখি, তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য আগামী দিনে ভাল থাকবে।” তিনি আরও জানান, ধনখড়ের মতো অভিজ্ঞ ও কর্মঠ নেতার অবদান চিরস্মরণীয়। দেশের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা এবং সংবিধান রক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয় বলেও মন্তব্য করেন মোদী।
এই বার্তা থেকেই পরিষ্কার, ধনখড়ের ইস্তফা নিয়ে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি প্রধানমন্ত্রী। বরং, তিনি তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক কর্মজীবনের প্রশংসা করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন ধনখড়ের অতীত অবদানকে সম্মান জানিয়েছেন, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য তাঁর প্রতি শুভকামনাও জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, জগদীপ ধনখড়ের রাজনৈতিক জীবনের পথচলা দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যময়। কংগ্রেস দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হলেও, পরে তিনি বিজেপির হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন। ২০১৯ সালে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সেখানে তিনি তৎকালীন তৃণমূল সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে টক্করে যান এবং বারবার আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন। এরপর ২০২২ সালে তাঁকে উপরাষ্ট্রপতির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে এনডিএ, এবং তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে ধনখড় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সংসদীয় বিতর্ক, বিল পাস, এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি ছিলেন দৃঢ়। তবে, বিগত কয়েক মাস ধরে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে জল্পনা চলছিল। সেই জল্পনারই অবসান ঘটিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে তাঁর ইস্তফাপত্র পাঠান।
ধনখড়ের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে এখনো পর্যন্ত নতুন উপরাষ্ট্রপতির নাম সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়নি। যদিও বিভিন্ন মহলে সম্ভাব্য নাম নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদীর বার্তা এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষা করেছে— রাজনৈতিক সৌজন্য এবং ব্যক্তিগত সহানুভূতির সংমিশ্রণে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ধনখড়ের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক যথেষ্ট সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। এখন দেখার, ধনখড় ভবিষ্যতে কোনওভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরবেন কি না, নাকি পুরোপুরি অবসর গ্রহণ করবেন।