High Court Cancels Hanuman Chalisa Recitation on Red Road
কলকাতার আইকনিক রেড রোডে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে হনুমান চালিশা (hanuman chalisa) পাঠের জন্য হিন্দু সেবা দলের আবেদন কলকাতা হাইকোর্ট শুক্রবার খারিজ করে দিয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে সংগঠনটি এখন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চ এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি টি.এস. শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ উভয়ই এই অনুষ্ঠানের জন্য রেড রোডে অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে, প্রধানত যানজট এবং জনসাধারণের অসুবিধার কারণ উল্লেখ করে।
হিন্দু সেবা দলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল
হিন্দু সেবা দলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল যে, ১২ এপ্রিল হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে সকাল ৫টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রেড রোডে প্রায় ৩,০০০ জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে একটি হনুমান চালিশা (hanuman chalisa) পাঠের আয়োজন করা হবে। তবে, কলকাতা পুলিশ এই স্থানে অনুষ্ঠানের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে এবং বিকল্প হিসেবে আর.আর. অ্যাভিনিউ বা শহীদ মিনার ময়দানে অনুষ্ঠান আয়োজনের পরামর্শ দেয়। পুলিশের যুক্তি ছিল, রেড রোডে এই অনুষ্ঠানের ফলে তীব্র যানজট এবং আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিচারপতি ঘোষ আদালতে প্রশ্ন তুলেছেন
বিচারপতি ঘোষ আদালতে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আবেদনকারীরা বিশেষভাবে রেড রোডেই এই অনুষ্ঠান করতে জোর দিচ্ছেন। হিন্দু সেবা দলের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন যে, গত ৩১ মার্চ রেড রোডে ঈদের নামাজের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং প্রতি বছর রাজ্য সরকারের দুর্গাপুজো কার্নিভালও এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, “যদি অন্য সম্প্রদায়কে এই স্থানে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া যায়, তবে আমাদেরও দেওয়া উচিত।” তবে, বিচারপতি ঘোষ এই পরিপ্রেক্ষিতে ঈদের নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “১৯১৯ সালে শহীদ মিনারে জলাবদ্ধতার কারণে ঈদের নামাজ রেড রোডে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এটি একটি দীর্ঘদিনের প্রথা। কিন্তু হনুমান চালিশা (hanuman chalisa) পাঠ কি কখনও রেড রোডে অনুষ্ঠিত হয়েছে?” আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, এটি প্রথমবারের মতো এই স্থানে এমন একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তৎকাল টিকিটের নতুন নিয়ম? বদলে গেল সময়? IRCTC জানাল গোটা বিষয়টা
বিচারপতি ঘোষ বলেন (hanuman chalisa)
এই যুক্তি বিবেচনা করে বিচারপতি ঘোষ বলেন, কোনও সংগঠন প্রথমবারের জন্য কোনও পাবলিক স্থানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে চাইলে তাদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৯৯৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে (মো. ইসমাইল ফারুকি বনাম ভারত সরকার) বলা হয়েছে, কোনও স্থানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অধিকার তখনই প্রযোজ্য হবে যদি সেই স্থানের বিশেষ ধর্মীয় তাৎপর্য থাকে।
এই ক্ষেত্রে, রেড রোডে হনুমান চালিশা (hanuman chalisa) পাঠের কোনও ঐতিহাসিক বা ধর্মীয় তাৎপর্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় একক বেঞ্চ অনুমতি দিতে অস্বীকার করে।
এরপর হিন্দু সেবা দল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে, কিন্তু সেখানেও একই রায় বহাল থাকে। ডিভিশন বেঞ্চ আবেদনকারীদের রেড রোডের পরিবর্তে বিকল্প স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নতুন আবেদন করার পরামর্শ দেয়। আদালত জানায়, রেড রোড একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং এখানে এমন কোনও অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় যা জনসাধারণের অসুবিধার কারণ হতে পারে।
আবেদনকারীরা উল্লেখ করেছিলেন
এদিকে, আবেদনকারীরা উল্লেখ করেছিলেন যে, রেড রোডের জমি সেনাবাহিনীর অধীনে এবং তারা ইতিমধ্যে এই অনুষ্ঠানের জন্য সেনাবাহিনীর অনুমতি পেয়েছেন। তবে, পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এই দাবির বিরোধিতা করে বলেন, কোনও নির্দিষ্ট স্থানে প্রথমবারের জন্য অনুষ্ঠান করতে হলে আইনি অধিকার প্রমাণ করতে হবে।
এই রায়ের পর হিন্দু সেবা দলের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত ধর্মীয় সমতার নীতির পরিপন্থী। সংগঠনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার কথা ভাবছি। আমাদের ধর্মীয় অধিকার এবং সমান আচরণের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে।”
রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন
এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন ফেলেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, যিনি উত্তর কলকাতায় একটি হনুমান জয়ন্তী মিছিলের জন্য বৃহস্পতিবার বিচারপতি ঘোষের বেঞ্চ থেকে অনুমতি পেয়েছেন, এই বিষয়ে এখনও সরাসরি মন্তব্য করেননি। তবে, তার মিছিলে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে এবং এটি একটি হনুমান মন্দিরে শেষ হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আদালতের এই সিদ্ধান্তকে জনসাধারণের সুবিধার জন্য যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করছেন, আবার অনেকে এটিকে ধর্মীয় বৈষম্য হিসেবে দেখছেন। হনুমান জয়ন্তী ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু উৎসব, যেখানে ভগবান রামের অনুগত ভক্ত হনুমানের জন্মদিন পালিত হয়।
হনুমান চালিশা, যা তাঁর গুণগানে রচিত একটি কাব্য, হিন্দু ভক্তদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ঘটনা কলকাতায় এই উৎসবের উদযাপনের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, হিন্দু সেবা দলের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সুপ্রিম কোর্টে সম্ভাব্য আপিল এই বিষয়ে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
রেড রোডে এই ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে বিতর্ক ভবিষ্যতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং জনসাধারণের সুবিধার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিতে পারে। এই মুহূর্তে, কলকাতার বুকে হনুমান জয়ন্তী উদযাপন বিকল্প স্থানে সীমাবদ্ধ থাকবে, এবং সবার দৃষ্টি এখন আইনি লড়াইয়ের পরবর্তী ধাপের দিকে।