ফিল্মি কায়দায় ব্যাঙ্ক লুটের চেষ্টা কলকাতায়, ধৃত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী

কলকাতায় ফের ব্যাঙ্ক ডাকাতির (Kolkata Bank Robbery) চেষ্টায় তোলপাড়। সার্ভে পার্ক থানার অন্তর্গত সন্তোষপুর অ্যাভিনিউয়ের এসবিআই শাখায় ঘটে গেল এক অভিনব ঘটনা। ‘খেলনা’ পিস্তল ও…

Government Employee Tries Kolkata Bank Robbery with Toy Gun

কলকাতায় ফের ব্যাঙ্ক ডাকাতির (Kolkata Bank Robbery) চেষ্টায় তোলপাড়। সার্ভে পার্ক থানার অন্তর্গত সন্তোষপুর অ্যাভিনিউয়ের এসবিআই শাখায় ঘটে গেল এক অভিনব ঘটনা। ‘খেলনা’ পিস্তল ও একটি ভাঁজ করা ছুরি নিয়ে ব্যাঙ্কে ঢুকে ডাকাতির চেষ্টা করলেন কেন্দ্রীয় সরকারের এক কর্মী। শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্ক কর্মী ও উপস্থিত গ্রাহকদের তৎপরতায় ধরা পড়ে যান তিনি। পরে পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে। ধৃতের নাম ডালিম বোস ওরফে টাটাই (৩৩)। তিনি কলকাতার সন্তোষপুর এলাকার বাসিন্দা।

ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দুপুর ২:৪৫ নাগাদ। ডালিম বোস, যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক বিভাগে কর্মরত, তিনি খেলনা পিস্তল (আসলে একটি গ্যাস লাইটার) ও একটি ভাঁজ করা ছুরি নিয়ে ব্যাঙ্কে ঢোকেন। ঢুকেই তিনি ব্যাঙ্কের মূল দরজা বন্ধ করে দেন এবং এক গ্রাহক ও শাখা ব্যবস্থাপককে ভয় দেখিয়ে টাকা চাইতে শুরু করেন। তবে ব্যাঙ্ক কর্মীরা তাঁর অস্ত্রটি খেলনা বন্দুক বলে ধরে ফেলেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ধরে ফেলেন। উপস্থিত অন্যান্য গ্রাহকরাও সাহায্য করেন এবং ধৃতকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

সার্ভে পার্ক থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডালিমকে গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় খেলনা পিস্তল ও ছুরি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত ডালিম বোস দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের স্নাতক এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক বিভাগে যোগাযোগ ভবনে সোর্টিং অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত। তাঁর বাড়ি ব্যাঙ্ক শাখার প্রায় ১০০ মিটারের মধ্যেই।

পুলিশি জেরায় ডালিম স্বীকার করেছেন, তিনি ৩০-৩৫ লক্ষ টাকার ঋণের বোঝায় জর্জরিত। মাসে মাসে ঋণের কিস্তির চাপ সামলাতে না পেরেই তিনি এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর কথায়, আর্থিক সঙ্কট এতটাই চরমে উঠেছিল যে, চোখে আঁধার দেখছিলেন। তাই ব্যাঙ্ক লুট করে কিছুটা অর্থ জোগাড়ের আশাতেই তিনি এই পদক্ষেপ করেন। যদিও ডাকাতির ঘটনাটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত ছিল না বলেই মনে হচ্ছে। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডালিমের সঙ্গে আর কেউ জড়িত কি না, তা জানার জন্য তাঁর মোবাইল ফোন ও অন্যান্য যোগাযোগের উপরে নজর রাখা হচ্ছে। বাইপাস এলাকার সমস্ত সিগন্যালে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজন গাড়ি দেখলেই তল্লাশি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisements

ঘটনার পর এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক যে, সরকারি চাকুরিরত একজন ব্যক্তি এমন কাজ করতে পারেন। অনেকেই বলছেন, আর্থিক দুর্দশার জেরে এমন পদক্ষেপ নিলেও এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যাঙ্ক কর্মীদের তৎপরতা ও উপস্থিত বুদ্ধিতেই বড়সড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে বলেই অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, কর্মসংস্থান থাকা সত্ত্বেও কীভাবে কেউ এমন হঠকারী পদক্ষেপ নিতে পারেন? অর্থনৈতিক চাপ, ঋণের বোঝা, মানসিক অস্থিরতা— সব মিলিয়ে সমাজে এক গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি দেখছে বিশ্লেষকরা। পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ধৃতের মানসিক অবস্থারও মূল্যায়ন করা হবে।

বর্তমানে ধৃত ডালিম বোস পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আদালতে পেশ করার প্রস্তুতি চলছে। তবে আপাতত গোটা শহরজুড়ে এই ঘটনার রেশ থেকেই যাচ্ছে।