‘মেরুকরণের রাজনীতি করেননি!’ বেঙ্গল ফাইলস নিয়ে মুখ খুললেন গোপাল পাঁঠার পরিবার

‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ চলচ্চিত্র নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন গোপাল মুখোপাধ্যায় (Gopal Patha) ওরফে গোপাল পাঁঠার পরিবার। গোপাল পাঁঠার নাতনি নিহারিকা মুখোপাধ্যায় এই চলচ্চিত্রে তাঁর দাদুর…

Gopal Patha

‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ চলচ্চিত্র নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন গোপাল মুখোপাধ্যায় (Gopal Patha) ওরফে গোপাল পাঁঠার পরিবার। গোপাল পাঁঠার নাতনি নিহারিকা মুখোপাধ্যায় এই চলচ্চিত্রে তাঁর দাদুর চরিত্রের উপস্থাপনার ধরন নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা চলচ্চিত্রের বিরোধী নই। আমরা বিরোধী তাঁর চরিত্রকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার।

তাঁর চরিত্রকে সম্পূর্ণ বিকৃত করা হয়েছে। তাঁকে ‘এক থা কসাই’ বলা হয়েছে। তিনি যা কিছু করেছিলেন, তা দেশের কল্যাণের জন্য করেছিলেন। তিনি নিজের কথা কখনো ভাবেননি। মুসলিম দাঙ্গাকারীদের প্রতিরোধ করতে তিনি যা করার দরকার ছিল, তাই করেছিলেন।

   

কিন্তু এর মানে এই নয় যে তিনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন। আমাদের আপত্তি এই যে, যদি আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের চরিত্র চিত্রিত করা হয়, তবে তার সম্পর্কে পরিবারের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া উচিত।

পরিবারের চেয়ে ভালো বর্ণনা কেউ দিতে পারে না। গোপাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতার নায়ক। তাঁর চরিত্রে যিনি অভিনয় করছেন, তিনিও জানেন না গোপাল মুখোপাধ্যায় কেমন মানুষ ছিলেন।”গোপাল মুখোপাধ্যায়, যিনি গোপাল পাঁঠা নামে বাংলার ইতিহাসে অমর, ১৯৪৬ সালের ‘দ্য গ্রেট কলকাতা কিলিং’-এর সময় তাঁর সাহসী ভূমিকার জন্য পরিচিত।

সেই সময় মুসলিম লীগের সমর্থকদের দ্বারা কলকাতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছিল। গোপাল পাঁঠার নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল, যা দাঙ্গাকারীদের পিছু হটতে বাধ্য করেছিল।

তবে, তাঁর এই সংগ্রামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে তাঁকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে বলে পরিবারের অভিযোগ।নিহারিকা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার দাদু কখনো মেরুকরণের রাজনীতি করেননি। তিনি দেশের মানুষের জন্য, সমাজের কল্যাণের জন্য কাজ করেছিলেন।

তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক ঐক্য ও শান্তি। কিন্তু এই চলচ্চিত্রে তাঁকে এমনভাবে দেখানো হয়েছে, যা তাঁর প্রকৃত চরিত্রের সঙ্গে মেলে না।” তিনি আরও জানান, চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি, যা তাঁদের কাছে অত্যন্ত আপত্তিকর।‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী, যিনি ইতিপূর্বে তাঁর চলচ্চিত্রের জন্য বিতর্কের মুখে পড়েছেন।

এই ছবিতে গোপাল পাঁঠার চরিত্রকে নাকি একজন ‘কসাই’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা তাঁর পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। নিহারিকা বলেন, “আমরা চাই, আমাদের দাদুর প্রকৃত গল্প জনগণের সামনে আসুক।

Advertisements

তিনি ছিলেন কলকাতার একজন সত্যিকারের নায়ক, যিনি সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের জন্য কাজ করেছিলেন।”গোপাল পাঁঠার পরিবার জানিয়েছে, তারা চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবছে।

তারা দাবি করেছেন, তাঁদের পারিবারিক ইতিহাস এবং গোপাল পাঁঠার অবদানকে বিকৃত করা হয়েছে। একই সঙ্গে, তারা জানিয়েছেন যে, তারা একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন, যেখানে গোপাল পাঁঠার প্রকৃত জীবনী তাঁদের নিজস্ব বক্তব্য এবং তথ্যের ভিত্তিতে তুলে ধরা হবে।

এই বইটি লিখছেন লেখক সৌরভ চক্রবর্তী, এবং এটি ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দারা এবং গোপাল পাঁঠার সমর্থকরাও এই চলচ্চিত্রের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তারা বলেন, গোপাল পাঁঠা ছিলেন কলকাতার একজন অগ্নিযুগের নায়ক, যিনি সাম্প্রদায়িক হিংসার সময় শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর চরিত্রকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা কেবল তাঁর অবদানের অপমানই নয়, বরং ইতিহাসের প্রতি অবিচার।এই ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যুক্ত Poco M6 Plus 5G এখন আরও সস্তা, দাম মাত্র ১০,৪৯৯ টাকা

অনেকে মনে করছেন, গোপাল পাঁঠার নাম ব্যবহার করে কিছু মহল রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা করছে। তবে, তাঁর পরিবার এই ধরনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। নিহারিকা বলেন, “আমরা চাই আমাদের দাদুর প্রকৃত গল্প মানুষের কাছে পৌঁছাক। তিনি কখনো সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি ছিলেন দেশের জন্য নিবেদিত একজন সত্যিকারের যোদ্ধা।”