বিয়ের মরসুমে সোনার দাম হু হু করে বাড়ছে, যা কলকাতার খুচরো বাজারে ইতিমধ্যে ৮১ হাজার টাকাকে পেরিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং এই পরিস্থিতি গয়না ব্যবসায়ীদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে কলকাতায় ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট পাকা সোনার দাম প্রথমবারের মতো ৮১ হাজার টাকার মাইলস্টোন অতিক্রম করেছে। এর সঙ্গে পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) যোগ করলে দাম দাঁড়িয়েছে ৮৩,৪৩০ টাকা।
গত বছরের (২০২৪) শেষের দিকে সোনার দাম কিছুটা থিতু হলেও, নতুন বছরে সোনার দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম পতন। গত ছয়টি সেশনের মধ্যে পাঁচটিতেই ডলারের মান কমেছে, যার ফলে লগ্নিকারীরা সোনায় বেশি করে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। ফলে সোনার চাহিদা বেড়েছে এবং দামও বাড়ছে।
বিশ্বের বিখ্যাত জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যাম মেহরা এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছেন, যার ফলে বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই সুরক্ষিত লগ্নির খোঁজে সোনায় বিনিয়োগ করছেন। এর ফলস্বরূপ বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।”
ভারতের ক্ষেত্রে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো, ভারতীয় টাকার নিরিখে ডলার খুবই শক্তিশালী। ফলে সোনার আমদানি ব্যয় বেড়েছে, যা খুচরো বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ সোনা আমদানি করা হয়, এবং ২০২৫ সালে সেই আমদানি খরচ অনেকটাই বেড়েছে, যা বাজারে সরবরাহ কমাতে এবং দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে, সোনার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অনেকেই সোনায় বিনিয়োগ করার দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনায় বিনিয়োগের বেশ কিছু উপায় রয়েছে। প্রথমত, প্রথাগত বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বর্ণালঙ্কার, স্বর্ণমুদ্রা বা সোনার শিল্প সামগ্রী কেনা যায়। এর পাশাপাশি সোনায় বিনিয়োগের আরও কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যেমন সোনার বন্ড, সোনা বিনিয়োগ প্রকল্প ইত্যাদি।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট পাকা সোনার দাম ছিল ৪৮,৬০০ টাকা, যা পরের বছর বেড়ে ৫৫,৭৫০ টাকায় পৌঁছেছিল। ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর, সোনার দাম দাঁড়িয়েছিল ৬৮,৩৫০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে। এখন, ২০২৫ সালে, সোনার দাম ৮১ হাজার টাকার বেশি হওয়ায়, গয়না ব্যবসায়ীরা অনেকটাই চিন্তিত। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এই মূল্যবৃদ্ধি অলঙ্কারের বাজারে ভাটা ফেলতে পারে, বিশেষ করে বিয়ের মরসুমে যেখানে গয়নার চাহিদা থাকে খুবই বেশি।
বিয়ে, উৎসব এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য সোনার গয়না কিনতে অনেকেই এই সময়ে এগিয়ে আসেন, তবে সোনার দাম বৃদ্ধি তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। সোনা সাধারণত একটি সুরক্ষিত বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে তার মূল্য বৃদ্ধির ফলে গয়না শিল্পের উপর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সোনার দাম আরো বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থাকলেও, আসল প্রশ্ন হচ্ছে, এই দাম বৃদ্ধি কীভাবে সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ ফেলবে এবং গয়না ব্যবসায়ীরা কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন।