পাহাড়ি রাজনীতিতে গেরুয়া শিবিরের কৌশল, বিজেপি-মোর্চা কাছাকাছি

রাজ্য রাজনীতিতে ফের নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত। বুধবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের বিজেপি দপ্তরে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (জিজেএম) মুখ্য…

"Why Bengal BJP Chief Chose the Party's Old Office for His First 'Karmi Durbar'"

রাজ্য রাজনীতিতে ফের নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত। বুধবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের বিজেপি দপ্তরে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (জিজেএম) মুখ্য নেতা রোশন গিরি (Roshan Giri)। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মোর্চার আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পাহাড়ি রাজনীতি এবং চা বাগান বেল্টে বিজেপি যে আবারও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চাইছে, এই বৈঠক সেই ইঙ্গিতই বহন করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

প্রসঙ্গত, এর আগেই বিজেপি এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত মেলে। গত ৩১ জুলাই কলকাতার নিজাম প্যালেসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মোর্চার সর্বোচ্চ নেতা বিমল গুরুং এবং রোশন গিরি। বিধানসভা ভোটের মাত্র দেড় বছর আগে সেই সাক্ষাৎ রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। বুধবার শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে রোশন গিরির বৈঠক সেই ধারাবাহিকতাকেই আরও শক্তিশালী করল।

   

বিজেপি সূত্রে খবর, পাহাড় এবং দুয়ার্সের রাজনৈতিক সমীকরণে নিজেদের অবস্থান ফের শক্ত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। গত কয়েক বছরে চা বাগান বেল্টে বিজেপির ভোটভিত্তি অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। তাই বিজেপি নেতৃত্ব বিমল গুরুংদের প্রভাব ব্যবহার করে পাহাড়ে নিজেদের রাজনৈতিক জমি ফেরাতে চাইছে। রোশন গিরি এই বৈঠক শেষে শমীক ভট্টাচার্যকে পাহাড় সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানা গেছে। সূত্রের মতে, খুব শীঘ্রই বিজেপি নেতৃত্ব পাহাড় সফরে যেতে পারেন।

পাহাড়ের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারে নেমেছিলেন বিমল গুরুং। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি ও কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার সম্পর্ক একেবারেই মসৃণ নয়। এই প্রেক্ষাপটে একদিকে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এবং অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতির সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্বের ধারাবাহিক বৈঠক নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয় বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

Advertisements

রাজনৈতিক মহলের দাবি, পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রভাব এখনো যথেষ্ট দৃঢ়। সেই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি ও চা বাগান অঞ্চলে নিজেদের হারানো জমি পুনরুদ্ধারের কৌশল নিয়েছে বিজেপি। এর পাশাপাশি মোর্চার পক্ষ থেকেও বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মোর্চা এবং বিজেপির সম্পর্ক একাধিকবার ওঠানামা করেছে। এবার ২০২৬ সালের ভোটকে সামনে রেখে ফের দুই পক্ষের সমঝোতার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।

রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, বিমল গুরুং ও রোশন গিরি ফের বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছেন, কারণ পাহাড়ে গোর্খা স্বশাসনের দাবিকে সামনে রেখেই বিজেপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মিত্রতার সম্পর্ক বজায় রেখেছিল জিজেএম। বিজেপি এখনো গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি কার্যকর না করলেও পাহাড়ে বিজেপি-বিমল ঘনিষ্ঠতা ভোটের অঙ্কে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে বুধবারের বৈঠক পাহাড়ি রাজনীতির পাশাপাশি সারা রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ভূমিকা নিতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে পাহাড়ে বিজেপি-গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এই ঘনিষ্ঠতা যে গেরুয়া শিবিরের কৌশলগত পরিকল্পনারই অঙ্গ, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রায় কোনও সন্দেহ নেই।