কলেজ ধর্ষণকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ কে?

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের এক প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে কলেজের মধ্যেই গণধর্ষণের (Gangrape) অভিযোগে উত্তাল শহর। ঘটনার কেন্দ্রে থাকা মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র সম্পর্কে সামনে…

কলেজ ধর্ষণকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ কে?

কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের এক প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে কলেজের মধ্যেই গণধর্ষণের (Gangrape) অভিযোগে উত্তাল শহর। ঘটনার কেন্দ্রে থাকা মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র সম্পর্কে সামনে আসছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য।

পুলিশ সূত্রের খবর, মনোজিৎ ২০২২ সালে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করে। বর্তমানে সে কলেজের স্থায়ী কর্মী না হলেও অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কলেজ চত্বরে তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। কলেজে পড়াকালীন মনোজিৎ দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) ইউনিট প্রেসিডেন্ট ছিল। এছাড়া জেলা স্তরের TMCP-র সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল সে। আলিপুর দায়রা আদালতে ‘ক্রিমিনাল লইয়ার’ বা ফৌজদারি আইনজীবী হিসেবেও কাজ করত বলে জানা গেছে।

   

স্থানীয় সূত্রে খবর, যুব তৃণমূলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছিল মনোজিৎ। কলেজ জীবনে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। তবু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বারবার রক্ষা পেয়েছে সে।

এই ঘটনার সঙ্গে আরও দুই অভিযুক্তের নামও সামনে এসেছে। একজন প্রথম বর্ষের এবং অন্যজন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। জানা গেছে, এই দুইজনও TMCP-র সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।

পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে নির্যাতিতা ছাত্রী জানিয়েছেন, গত ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত কলেজের একটি ঘরে তাকে আটকে রেখে লাগাতার অত্যাচার করা হয়। অভিযোগ, ইউনিয়ন রুমে তাকে জিএস করার প্রলোভন দেখিয়ে ডাকা হয়। পরে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ছাত্রী তাতে রাজি না হওয়ায় গার্ডরুমে টেনে নিয়ে গিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।

ঘটনার পরে, ২৬ জুন নির্যাতিতা ছাত্রী কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করে। পার্ক সার্কাসের CNMC হাসপাতালে নির্যাতিতার প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। একইসঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদেরও মেডিক্যাল পরীক্ষা এবং বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।

Advertisements

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছ থেকে প্রথম দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। সন্ধ্যা ৭টা ২০ এবং ৭টা ৩৫ মিনিটে তাঁদের আটক করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ মনোজিৎ মিশ্রকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।

তবে তিনজন অভিযুক্ত এবং নির্যাতিতার নাম-পরিচয় গোপন রেখেছে প্রশাসন। এই ঘটনায় তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধীরা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘‘এটা তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের প্রকৃত চরিত্রের প্রকাশ। দোষীদের কড়া শাস্তি দিতে হবে।’’

অন্যদিকে, TMCP জানিয়েছে, সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা করছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। পুলিশও জানিয়েছে, ধৃতদের কড়া জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং চার্জশিট প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

পুরো শহর জুড়ে এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কলেজ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠছে বড় প্রশ্ন। ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।