কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকায় ফের ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনা। এবার কলেজ চত্বরে গণধর্ষণের (Gangrape) অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তীর কসবার একটি বেসরকারি আইন কলেজের কয়েকজন ছাত্র এবং প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কসবা থানার পুলিশ। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ধৃতরা অভিযুক্ত তরুণীর সহপাঠী এবং কলেজের প্রাক্তনী।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যায় কলেজের মধ্যেই ঘটেছে এই নৃশংস অপরাধ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত পৌনে একটা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে কলেজ চত্বরের একটি ফাঁকা অংশে তরুণীকে ধর্ষণ (Gangrape) করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ পেয়েই অভিযুক্তদের সন্ধানে তৎপর হয় কসবা থানার পুলিশ।
ওই রাতেই তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সিদ্ধার্থ শঙ্কর শিশু রায় উদ্যানের সামনে থেকে দুই অভিযুক্তকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল অভিযুক্তের খোঁজ পায় পুলিশ। পরে তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয় গণধর্ষণের অভিযোগে।
জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে একজন কলেজেরই ছাত্র পরিষদের নেতা। তিনি ওই আইন কলেজেরই প্রাক্তন পড়ুয়া। বর্তমানে একজন অস্থায়ী কর্মী। এমনকি, কলেজের ছাত্র পরিষদের রাশও তার হাতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজের ‘রাজনৈতিক মহলে’ আলাদাই গাম্ভীর্য রয়েছে ওই তৃণমূল নেতার। এবার তার নাম জড়াল গণধর্ষণ-কাণ্ডে।
ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ডি (গণধর্ষণ) (Gangrape), ৩৪ (যৌথ অপরাধ) সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্ত তিনজনের মোবাইল ফোন ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘটনার রাতে নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানেই তার মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলেজ ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেনসিক টিমও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জেনারেট করা হয়েছে ডিএনএ নমুনা। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসতে পারে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বলেই মনে করছে তদন্তকারী আধিকারিকরা।
এদিকে এমন ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে কলেজ চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। নির্যাতিতার অভিযোগ, ওই দিন সন্ধ্যায় কলেজের নির্জন একটি অংশে তাঁকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। তারপর চলতে থাকে শারীরিক অত্যাচার।
শুক্রবার দুপুরে অভিযুক্ত তিনজনকে আলিপুর আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আদালতে তাদের হেফাজতের আবেদন জানানো হবে।
এই ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনও মুখ খোলেনি। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটতে পারল? কোথায় ছিল নিরাপত্তারক্ষীরা?
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। প্রয়োজন হলে আরও অভিযুক্তের সন্ধান করা হবে। পাশাপাশি নির্যাতিতার মনোবল বৃদ্ধির জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা যাচাই ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।