আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা৷ পরেই শুরু হবে গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar)। প্রতি বছরই এই মেলায় লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে, কিন্তু এই বছর মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। জানুয়ারির ৮ তারিখ থেকে শুরু হবে গঙ্গাসাগর মেলা(Gangasagar), এবং এবার, রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আরও কঠোর ও তৎপর।
এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশের অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যা এই রাজ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রশাসন, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, মেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
গঙ্গাসাগর মেলায় (Gangasagar) এবার নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ইসরো (ISRO)-র সহায়তায় স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং, জিপিএস ট্র্যাকিং এবং ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হবে। বিশেষ করে, বাস, ভেসেল এবং লঞ্চে জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের চলাচল পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়াও, যদি কোনো কারণে ইন্টারনেট বা জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের সমস্যা হয়, তাহলে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মেলা ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে। তিনি জানিয়েছেন, মেলা চলাকালীন মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। মহিলা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উইনার্স টিমের ব্যবহারের পাশাপাশি থাকবে ক্যুইক রেসপন্স টিম। মেলা এলাকায় ট্রাফিক ম্যনেজমেন্ট, বোম ডিসপোসাল স্কোয়্যাড এবং সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে।
এই বছর গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় ১৫,০০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হবে। রাজ্য পুলিশ পাশাপাশি, সুন্দরবন জেলা পুলিশও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মেলা প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে, যাতে কোনো রকম অঘটন সহজে মোকাবিলা করা যায়। এছাড়াও, স্পিডবোট এবং লঞ্চের মাধ্যমে নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এবারের মেলায় উপকূল রক্ষী বাহিনী, বিএসএফ এবং নৌবাহিনীর সহায়তায়, জলপথে নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি, মেলার পরিসরে হেলিকপ্টার ও ড্রোনের মাধ্যমে আকাশপথে নজরদারি চালানো হবে। মেলা চলাকালীন গঙ্গাসাগরের উপকূলে নজরদারি বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, মেলা চলাকালীন উপকূল রক্ষী বাহিনী ছোট জাহাজ, হোভারক্রাফ্টের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
গঙ্গাসাগর মেলায় আসা পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের জন্য মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও, পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং সিভিল ডিফেন্সের দল মেলা এলাকায় মোতায়েন থাকবে।
গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে রাজ্য সরকার অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনকে জানিয়েছেন, বিশেষ নজরদারি রাখা হবে যাতে কোনো রকম সমস্যা সৃষ্টি না হয়। মেলার নিরাপত্তায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আইবি (Intelligence Bureau) এবং রাজ্য পুলিশকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গঙ্গাসাগর মেলার সব অংশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মেলা প্রাঙ্গণে যাতে কোনো অশান্তি বা দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সকল স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজ্য প্রশাসন নানান উদ্যোগ নিয়েছে এবং মেলা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পুরোপুরি প্রস্তুত।