‘দলে বিভাজন নয়’, অনুব্রতকে হুশিয়ারি মমতার

বীরভূমে তৃণমূলের প্রশাসনিক সভা এবং পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ঘিরে একাধিক বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সরকারিভাবে এ সভা ছিল প্রশাসনিক, তবে রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল…

‘দলে বিভাজন নয়’, অনুব্রতকে হুশিয়ারি মমতার

বীরভূমে তৃণমূলের প্রশাসনিক সভা এবং পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ঘিরে একাধিক বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সরকারিভাবে এ সভা ছিল প্রশাসনিক, তবে রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল পরোক্ষভাবে গভীর। বিশেষ করে, জেলা তৃণমূলের দুই কেন্দ্রীয় মুখ—অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখ—কে ঘিরে নেতৃত্বের বার্তা ও শরীরী ভাষা নিয়ে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা।

মঙ্গলবার বীরভূমের প্রশাসনিক সভায় মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর ডান দিকে ছিলেন উচ্চপদস্থ আমলারা। বাঁ দিকে বসেছিলেন মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ ও জেলা নেতৃত্ব। মমতার একদম পাশের চেয়ারটিতে বসেছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। তাঁর পাশেই জায়গা পান তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, যিনি সদ্য কারামুক্ত হয়েছেন। অথচ, আগের দিন অর্থাৎ সোমবারের প্রশাসনিক সভায় অনুব্রতের চেয়ার ছিল বেশ কিছুটা দূরে, চোখে পড়ার মতো পার্থক্য।

   

এদিন পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের সময়েও দেখা গেল দৃশ্যমান তারতম্য। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ডেকে নেন কেষ্ট (অনুব্রতের ডাকনাম)–কে এবং তাঁকেই দিয়ে শুরু করান ভাতা প্রদান। জেলা নেতৃত্বের অনেকেই যখন একে ‘সুস্পষ্ট বার্তা’ হিসেবে দেখছেন, তখন আরও বিস্ময় জাগায় কাজল শেখের ডাকা হওয়ার ক্রম। তাঁকে ডাক পড়ল সাত জন উপভোক্তার পরে। এই ঘটনার পর থেকেই অনুব্রত ঘনিষ্ঠ শিবিরে নতুন করে গুঞ্জন—”ফিরছেন দাদা”, আর দলে কি তবে শুরু হল পুনর্গঠনের বার্তা?

মঞ্চে নেতারা নিজেদের আসনে বসে পড়লেও, অনুব্রত কিন্তু আসেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই। এমনকি, অনুষ্ঠান শেষে যখন মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন, তখন কাজল শেখ তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। তখনই অনুব্রতের দিকে তাকিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সবাইকে নিয়ে চলবি!”—একটি ছোট্ট বাক্য, কিন্তু তার রেশ বহু গভীর। এরপর মুখ্যমন্ত্রী নিজে এগিয়ে এসে কাজলের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ দেন, এবং ধীরে ধীরে মঞ্চ ছাড়েন।

Advertisements

এই প্রসঙ্গে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, “সভা শেষে রওনা হওয়ার আগে দিদি বলে গিয়েছেন, সবাই এক সঙ্গে চলবি, সবাই এক সঙ্গে কাজ করবি। কোর কমিটি সবাইকে নিয়েই চলবে। সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “অনুব্রত মণ্ডলকে আবার দায়িত্বে ফেরানোয় অনেক কাজ এগিয়ে যাবে। তবে দলে একমাত্র সিদ্ধান্তদাত্রী দিদিই। আমি যতবার কোর কমিটির মিটিংয়ে গিয়েছি, তাতে কাজল ও কেষ্টদার মধ্যে কোনও প্রকাশ্য বিরোধ দেখিনি।”

রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, জেলা রাজনীতিতে ফের একবার ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুব্রত এখনও মামলার ঘেরাটোপে থাকলেও, তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, কাজল শেখও সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি হিসেবে নিজের আধিপত্য তৈরি করছেন। এই প্রেক্ষাপটে মমতার “সবাইকে নিয়ে চলবি” বার্তা আসলে দলীয় ঐক্যের পাঠ—কেউ যাতে আলাদা না হয়ে পড়েন, সেই চেষ্টাই স্পষ্ট।

রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনিক সভার আবহে এমন বার্তা শুধু ব্যক্তিকে নয়, সংগঠনকেও নতুন করে চাঙ্গা করার ইঙ্গিত। বীরভূমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কৌশলী কূটনীতি আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগেই দলের ভিত শক্ত করার দিকেই ইঙ্গিত করছে।