‘তরুণের স্বপ্ন’ (Taruner Swapna) প্রকল্পের অধীনে স্কুলছাত্রীদের ট্যাব কেনার জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এরপরেই অভিযোগ ওঠে যে, সেই ট্যাবের টাকা যেমন অনেক পড়ুয়ারাই পাননি, তেমনই অনেক পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে আবার দ্বিগুণ টাকা ঢুকেছে। স্কুলছাত্রীদের সেই ট্যাবের টাকা নিয়ে প্রতারণা করায় এবার এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করল বর্ধমান জেলা পুলিশ।
মঙ্গলবার মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এই চারজনের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ট্যাবের টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া চার অভিযুক্তের মধ্যে একজন মালদহের বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা হাসেম আলি, যিনি স্থানীয় একটি সাইবার ক্যাফের মালিক।
অন্য তিন জন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর এবং চোপড়া থানা এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে আশারুল হোসেন, সাদ্দিক হোসেন এবং মোবারক হোসেনের নাম উঠে এসেছে। এরা সবাই ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে। পুলিশ মনে করছে, এই চক্রে আরও কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। তাই তাঁদের খোঁজে ইতিমধ্যেই তল্লাশি অভিযান চালাতে শুরু করেছে পুলিশ। প্রথমের দিকে অভিযোগ উঠেছিল যে, রাজ্য সরকারের ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
কিন্তু অনেক পড়ুয়া সেই টাকা পাননি বা ভুলভাবে অন্য কারও অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। রাজ্য শিক্ষা দফতরের তদন্তে জানা যায়, চলতি বছরে ৩০০-রও বেশি পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। তাদের মধ্যে পূর্ব বর্ধমানের ৮৮ জন, পূর্ব মেদিনীপুরের ৬৫ জন এবং মালদহের ১৪৯ জন পড়ুয়া রয়েছেন, যাদের টাকার পরিমাণ সঠিকভাবে পৌঁছায়নি। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে টাকা দ্বিগুণও হয়ে গেছে।
শিক্ষা দফতরের তদন্তে উঠে এসেছে যে, হাসেম আলি জুলাই মাসে বাংলার শিক্ষা পোর্টালে একটি অ্যাকাউন্টে ঢুকে তথ্য পরিবর্তন করে। তার পরেই ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ট্যাব কেনার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে ইতিমধ্যে হাসেমের মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অন্য তিনজন, যারা চোপড়া ও ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা তারা পেশায় শ্রমিক হলেও সাইবার ক্যাফে থেকে কাজ করতেন, যেখানে এই ধরনের কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়।
বর্ধমান জেলা পুলিশের সুপার সায়ক দাস জানিয়েছেন, তাদের গ্রেফতারের পর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পুলিশ অভিযুক্তদের সাত দিনের জন্য হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চালানোর জন্য আদালতে আবেদন করেছে। তদন্তে এরই মধ্যে সাইবার ক্যাফে এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে চক্রের বিশদ তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু টাকার লেনদেন এবং অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা সাইবার প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটেছে, তাই সাইবার সেলের সাহায্য নেওয়া হবে।
অভিযুক্তদের ব্যাপারে আরও তথ্য পাওয়া গেলে অন্য সহযোগীদেরও চিহ্নিত করা হবে। এই ঘটনার পর রাজ্য শিক্ষা দফতর এবং প্রশাসনও তৎপর হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমার জানিয়েছেন, পুরো ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে এবং যদি এর পেছনে কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের কাছেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে যিনি নবান্নে একটি বৈঠক করেছেন। এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্য জুড়ে ট্যাব কেনার টাকা চুরি হওয়ার বিষয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষত, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে কারণ তারা মনে করছে, সরকারের উদ্যোগের ফলে তাদের অধিকার সঠিকভাবে রক্ষা হয়নি। শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং সততার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে জনগণের প্রত্যাশা এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করা।