ভারতের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত ফোর্ট উইলিয়াম। প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো এই ঐতিহাসিক দুর্গটির নাম বদলে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। এখন থেকে ফোর্ট উইলিয়াম পরিচিত হবে ‘বিজয় দুর্গ’ নামে। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি এখনও হয়নি, তবে প্রশাসনিকভাবে এই পরিবর্তন কার্যকর হয়ে গেছে এবং ইতিমধ্যেই কাজকর্মে ‘বিজয় দুর্গ’ নামটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফোর্ট উইলিয়াম মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। ১৬৯৬ সালে এই দুর্গটি তৈরি করা হয় এবং এর নামকরণ করা হয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নামে। তবে ইতিহাসের নানা ঘটনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করেছে। বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার আক্রমণের পর এই দুর্গটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে, ১৭৮১ সালে লর্ড ক্লাইভ এই দুর্গটির পুনর্নির্মাণ করেন।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ছাপ মুছে ফেলতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগ। সরকার জানায়, ‘বিজয় দুর্গ’ নামকরণের মাধ্যমে পুরনো ইতিহাসের অবশেষগুলো ভেঙে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার একটি প্রয়াস চলছে। নাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফোর্ট উইলিয়ামের ভেতরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশেরও নামকরণ পরিবর্তন করা হয়েছে।
এর মধ্যে একটি প্রধান পরিবর্তন হলো সাউথ গেটের নাম। পূর্বে যার নাম ছিল ‘সেন্ট জর্জ গেট’, এখন তাকে নতুন করে ‘শিবাজী গেট’ নামকরণ করা হয়েছে। আবার, কিচেনার হাউস, যা পূর্বে পরিচিত ছিল, তার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘মানেকশ হাউস’। এই পরিবর্তনগুলো সামগ্রিকভাবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের স্মৃতিচিহ্নগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যেই নেয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক, উইং কমান্ডার হিমাংশু তিওয়ারি জানান, গত বছরের ২ ডিসেম্বরেই ফোর্ট উইলিয়ামের নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা আসে। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি, তবে প্রশাসনিক দিক থেকে এই পরিবর্তন অনেক আগেই কার্যকর হয়ে গেছে।
এই পরিবর্তনটি মূলত ভারতের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সরকার মনে করে, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পুনঃস্থাপন করার মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ছাপ মুছে ফেলা সম্ভব। এর মাধ্যমে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং জাতীয় ঐক্যের চেতনাও প্রতিষ্ঠিত হবে।
এছাড়া, এই পরিবর্তনটির ফলে ফোর্ট উইলিয়ামের ইতিহাসের সঙ্গে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রশাসনিক স্তরের বহু মানুষ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাঁদের মতে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ দেবে।
ফোর্ট উইলিয়ামের নতুন নামকরণের মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে একটি নতুন জাতীয় গর্ব এবং ঐতিহ্যবোধ সৃষ্টি হবে, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার উৎস হতে পারে।