মেয়ো রোডে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিবাদ মঞ্চ ঘিরে যখন রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে, ঠিক সেই সময় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে তুলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাবাহিনী সংক্রান্ত মন্তব্যের বিরোধিতা করে এবার সরব হলেন দেশের প্রাক্তন সেনাকর্তারা। শুধু মৌখিক প্রতিবাদেই থেমে না থেকে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরাসরি মেয়ো রোডেই ধরনায় বসবেন।
এই উদ্দেশ্যে তাঁরা ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয়েছেন। আবেদনকারীদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে দেশের সেনাবাহিনীর মর্যাদাকে আঘাত করা হয়েছে। একজন দায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন বক্তব্য কাম্য নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। এর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাতে চান তাঁরা। সেই অনুযায়ী, ৮ সেপ্টেম্বর মেয়ো রোডে শান্তিপূর্ণ ধরনা কর্মসূচির আয়োজন করতে চান বলে জানিয়েছেন।
তবে কলকাতা পুলিশ এই কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়ায় তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে প্রতিটি নাগরিকের। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোও সেই অধিকারেই পড়ে। সেক্ষেত্রে পুলিশ অনুমতি না দিয়ে তাঁদের মৌলিক অধিকার খর্ব করছে বলেই দাবি আবেদনকারীদের।
এই মামলার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে বিষয়টি উত্থাপিত হয়। বিচারপতি গোষ্ঠী ৮ সেপ্টেম্বর ধরনা কর্মসূচির আবেদন গ্রহণ করেছেন এবং সেই দিনই মামলার শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন। আদালতের নির্দেশ অনুসারে, উভয় পক্ষকে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও যুক্তি আদালতের কাছে পেশ করতে বলা হয়েছে।
প্রাক্তন সেনাকর্মীদের এই পদক্ষেপের পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক বক্তব্য। সম্প্রতি তিনি সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু মন্তব্য করেন, যা বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। প্রাক্তন সেনাকর্তারা মনে করছেন, এই মন্তব্য সেনাবাহিনীর পেশাগত গরিমা ও দায়িত্ববোধকে অবমাননা করে।
তাঁদের মতে, সেনাবাহিনী হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সেনার বিরুদ্ধে জনসমক্ষে এভাবে মন্তব্য করা কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই তাঁরা চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করুন এবং সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেই তাঁদের মত। এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুসংগঠিত ও গর্বের প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে টেনে আনা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন কেউ কেউ।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ঘটনা রাজ্য-রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে। মেয়ো রোড এলাকায় ধরনা কর্মসূচি সফল হলে, তা শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তির উপর নয়, গোটা সরকারের উপরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন আবেদনকারী প্রাক্তন সেনাকর্তারা।