কলকাতা: পুজোর আনন্দের মরসুমে কলকাতা শহরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এক নতুন প্রতারণার কাণ্ড। দুর্গাপুজোর পাসকে ঘিরে অনলাইনে সক্রিয় হয়েছে একাধিক অসাধু চক্র। অভিযোগ, বিভিন্ন সংস্থার নামে নকল পাস (Fake Durga Puja pass) তৈরি করে তা উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফোরাম ফর দুর্গোৎসব।
শুক্রবার রাতে হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপে ঘটেছে চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা। এক যুবক ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের নামে একটি পাস দেখিয়ে মণ্ডপে প্রবেশ করতে গেলে সন্দেহ হয় পুজো কমিটির সদস্যদের। তাঁরা জানতে পারেন, ওই যুবক ৬০০ টাকার বিনিময়ে পাসটি কিনেছেন সামাজিক মাধ্যমে পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে। অথচ এই পাস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য বরাদ্দ।
এখানেই শেষ নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা পেজ খুলে এখন খোলাখুলি চলছে পুজোর পাস বিক্রি। অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার বিনিময়ে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের নামে ভুয়ো পাস বিক্রি করছে। অনেকে না বুঝেই এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, “পুজোর পাসকে ঘিরে প্রতারণা চলছে। আমাদের নজরেও বিষয়টি এসেছে। আমরা সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ দায়ের করব।” সংস্থার পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, পাস কেনাবেচা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এতে যুক্ত থাকলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে অভিযোগ এলে তদন্ত শুরু হবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, “পুজোর পাস সংক্রান্ত কোনও সন্দেহজনক পোস্ট বা অফার দেখলে অবিলম্বে পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্গাপুজোকে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস ও চাহিদাকে হাতিয়ার করে প্রতারকরা নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে। এবারে সেই কৌশল পুজোর পাস। বৃহত্তর পুজো আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতারণার ঝুঁকিও বাড়ছে।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসব জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে সচেতন করাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য। কোনও পাস বিক্রির প্রস্তাব বা অনলাইনে সন্দেহজনক বিজ্ঞাপন দেখলে অবিলম্বে তা রিপোর্ট করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রতারণা রুখতে পুলিশ এবং আয়োজক কমিটি যৌথভাবে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতার মাধ্যমেই এই ধরনের অপরাধ রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছে তারা। পুজোর আনন্দ যেন প্রতারণায় কলঙ্কিত না হয়, সেই লক্ষ্যে এখন সক্রিয় ফোরাম ফর দুর্গোৎসব ও কলকাতা পুলিশ।