বহিষ্কারের পর গ্রেফতার তৃণমূলের যুব নেতা তরুণ তিওয়ারি

রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) যুব নেতা (youth leader) তরুণ তিওয়ারির (Tarun Tiwari) বিরুদ্ধে উঠা গুরুতর অভিযোগের পর থেকে দল কার্যত অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। তরুণ…

Chandni Chowk French Ambassador

রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) যুব নেতা (youth leader) তরুণ তিওয়ারির (Tarun Tiwari) বিরুদ্ধে উঠা গুরুতর অভিযোগের পর থেকে দল কার্যত অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। তরুণ তিওয়ারি, যিনি রাজ্যের যুব তৃণমূলের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার পর গ্রেফতারির (arrested) ঘটনাটি রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ তিওয়ারির বিরুদ্ধে শহরের এক ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ ছিল, যা তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী, ব্যবসায়ী সচিন পাটিল অভিযোগ করেছিলেন যে, তরুণ তাকে একটি ব্যবসায়িক মামলার নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে ৬ লক্ষ টাকা চাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তরুণ তিওয়ারি তাকে আড়াই লক্ষ টাকা গ্রহণ করার পর, সচিন পাটিল অভিযোগ করেন যে, তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার নাম দিয়ে তরুণ তাকে ভয় দেখাচ্ছিলেন। এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর, তা রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করে এবং সেখান থেকেই প্রথমে তরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।

   

তবে, তরুণ তিওয়ারি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, যে টাকা পাটিল তাকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তা তিনি গ্রহণ করেননি এবং এই অভিযোগের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। তরুণের দাবি ছিল, পাটিল তার বিরুদ্ধে ফাঁসানোর জন্যই তাকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন, যা তিনি নেননি। তবুও, পুলিশ তদন্তে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়, এবং ওই ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে টাকা তোলা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তরুণ তিওয়ারিকে দল থেকে সাসপেন্ড করে দেয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের অনৈতিক কাজ বরদাস্ত করা হবে না এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে দল তা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করবে।

এই ঘটনার পর রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীরা তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে দাবি করেছে, দলটি দীর্ঘদিন ধরে তোলাবাজির রাজনীতিতে যুক্ত রয়েছে এবং তরুণ তিওয়ারির এই ঘটনা তারই একটি উদাহরণ। বিরোধীদের বক্তব্য, তৃণমূলের নেতৃত্বের পক্ষে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয়া অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের আড়াল করতে চাইছে।

এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তারা বারবার জানিয়ে এসেছে যে, দলের মধ্যে কোনওভাবেই দুর্নীতি, তোলাবাজি বা অন্য কোনো অনৈতিক কাজ সহ্য করা হবে না। দলের সাধারণ সদস্যদের জন্য একটি কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তারা যদি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, জনগণের সঙ্গে থাকা, তাদের সমস্যা সমাধান করা এবং তাদের দৃষ্টিতে সৎ, ন্যায্য কাজ করা দলটির মূল উদ্দেশ্য।

তৃণমূল কংগ্রেসের এই কঠোর পদক্ষেপের পর রাজ্য রাজনীতি আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে। বিরোধী শিবির বারবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলেছে। তাদের অভিযোগ, দলটি নিজেদের নেতাদের দিক থেকে একটি সৎ রাজনৈতিক চিত্র পেশ করে, কিন্তু যখনই কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, তখন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিরোধীরা বলছে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের এই দ্বৈতনীতি দলের প্রতি মানুষের আস্থাকে আরও কমিয়ে দেবে।

তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তরুণ তিওয়ারি এবং অন্যদের বিরুদ্ধে সাসপেনশন বা বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, এটা জনগণকে স্পষ্ট বার্তা যে, তারা দলের মধ্যে দুর্নীতি বা অন্য কোনো অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াই চালাবে। তবে বিরোধীরা এই ঘটনাকে একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নিজেদের আক্রমণ আরও তীব্র করেছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এখন একটাই সুযোগ, তারা কীভাবে নিজেদের শুদ্ধতা বজায় রাখবে এবং দলের মধ্যে সৎ, নৈতিক নেতাদের প্রসার ঘটাবে। দলের ভেতর কোনও অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া একদিকে যেমন দলটির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে, তেমনি এই ধরনের ঘটনাগুলি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা সেল থেকেও মণিশঙ্কর মণ্ডল নামে এক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ ছিল। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে যে, দলের কোনও শাখাতেই অনৈতিক কাজ সহ্য করা হবে না।

এখন, তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, তাদের ভাবমূর্তিকে অক্ষুণ্ণ রাখা এবং দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা। এই ঘটনার পর, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের শুদ্ধতা এবং নৈতিকতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।