চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা সরকারি চাকরি দেওয়ার কোনও প্রক্রিয়ায় ব্যবহার না করে বরং ব্যক্তিগত আলু ব্যবসায় খাটানো হয়েছে দিনের পর দিন—এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে তদন্তে নেমেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। আর অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna saha) । চাকরির নামে সংগৃহীত কোটি টাকার উৎস, ব্যবহারের পদ্ধতি এবং তহবিলের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ইডি ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য সামনে এনেছে।
অভিযোগের প্রেক্ষাপট
সূত্রের খবর অনুযায়ী, জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna saha) তাঁর প্রভাব খাটিয়ে বহু চাকরি প্রার্থীকে আশ্বাস দেন, তাঁরা চাইলে শিক্ষকতা কিংবা সরকারি চাকরি পেতে পারেন। এই প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে প্রতি প্রার্থী থেকে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা—কিছু ক্ষেত্রে ৮ লক্ষ, কিছু ক্ষেত্রে ১২ লক্ষ টাকারও বেশি।
ইডি জানিয়েছে, এই টাকাগুলির একটি বড় অংশ সরাসরি পাঠানো হয়েছিল জীবনকৃষ্ণ সাহার (Jiban Krishna saha) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এমনকি সেই অ্যাকাউন্টে হঠাৎ করে বিরাট পরিমাণে টাকা ঢোকার তথ্যও ইডি হাতে পেয়েছে। প্রথমে এগুলিকে পারিবারিক ব্যবসার আয় বলে দাবি করলেও, তদন্তে দেখা যায় এসব অর্থ কৃষিভিত্তিক কোনও ব্যবসায় নয় বরং একটি বড়সড় দুর্নীতির ফসল।
আলু ব্যবসায় কালো টাকার ব্যবহারের অভিযোগ
তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য—এই অর্থের একটি বড় অংশ ব্যবহার করা হয়েছে আলু ব্যবসায়। জীবনকৃষ্ণ সাহা নিজে দাবি করেছেন, তিনি একটি জমিদার পরিবার থেকে এসেছেন এবং তাঁর ব্যবসা প্রায় ২ কোটি টাকার। তবে ইডি জানাচ্ছে, সেই ব্যবসার মূলধন আসলে সেই প্রার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ, যাঁরা চাকরি পাওয়ার আশায় জীবনকৃষ্ণর দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
এই মুহূর্তে ইডি একটি নির্দিষ্ট হিসেবের মাধ্যমে খতিয়ে দেখছে, ঠিক কতজন প্রার্থী জীবনকৃষ্ণর কাছে অর্থ প্রদান করেছিলেন এবং তাঁদের কাছ থেকে ঠিক কী প্রতিশ্রুতি আদানপ্রদান হয়েছিল। এই টাকার উৎস এবং খরচের হিসেবের মধ্যে গরমিল থাকায় পুরো বিষয়টিকে এখন অর্থপাচার মামলার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে।
তলব করা হচ্ছে প্রার্থীদের
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল—ইডি এবার সরাসরি সেই চাকরিপ্রার্থীদেরই তলব করতে শুরু করেছে, যাঁরা টাকা দিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ সাহাকে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ২০ জনের তালিকা তৈরি হয়েছে, এবং পরবর্তী পর্যায়ে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তলব হওয়া ব্যক্তিদের সামনে বসিয়ে জেরা করতে চায় ইডি, যাতে বোঝা যায় তাঁরা কার মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিলেন, কত টাকা লেনদেন হয়েছে, এবং কোনও লিখিত প্রতিশ্রুতি ছিল কিনা।
তদন্তকারী সংস্থা এই জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে আরও কঠোর তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে চাইছে, যাতে প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা যায়। তদন্তে উঠে আসছে তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রাও এই অর্থচক্রে জড়িত থাকতে পারেন। ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি ও বাণিজ্যিক নথি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে ইডি।
বিধায়কের বিপদ বাড়ছেই
প্রাথমিকভাবে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও, জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ইডির হাতে জমা পড়েছে। ইডি সূত্রে জানানো হয়েছে, তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই বিপদ বাড়ছে বিধায়কের। অর্থপাচার, প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের ধারা অনুযায়ী মামলা হতে পারে বলেও সূত্রের খবর।
রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই এই ঘটনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলি বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। যদিও দলীয় স্তরে এখনই কোনও চূড়ান্ত অবস্থান নেওয়া হয়নি, তবে পরিস্থিতি যে আগামী দিনে আরও জটিল হতে চলেছে, তা নিশ্চিত বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।