কলকাতার একাধিক জায়গায় ইডি-র হানা

মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলকাতার (Kolkata) বিভিন্ন জায়গায় ইডি (ED) বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এর একটি ব্যাপক অভিযান (Raids) নজরে আসে। দমদমের গোরাবাজার এলাকায় একটি ব্যবসায়ীর বাড়িতে…

ED Raids

মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলকাতার (Kolkata) বিভিন্ন জায়গায় ইডি (ED) বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এর একটি ব্যাপক অভিযান (Raids) নজরে আসে। দমদমের গোরাবাজার এলাকায় একটি ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি, যা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে। এদিন ৪৯ ডা. এস পি মুখার্জি রোডে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডি-র টিম হাজির হয়। জানা যায়, এই ব্যবসায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি, যার কারণে তার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ ওঠে।

তবে, শুরুতেই ইডি (ED) অফিসাররা ব্যবসায়ী বা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। বাড়ির গেটের সামনে অপেক্ষা করতে হয় তাদের, যা ইডি-র অভিযানকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে। প্রথমে তাদের জন্য বাধা সৃষ্টি হলেও, পরে তদন্তকারীরা বাড়িতে প্রবেশ করে। এই অভিযান মূলত ঝাড়খণ্ডের একটি ব্যাংক প্রতারণা মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার মামলা অনুযায়ী, ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি পরিচালনা করা হয়।

   

এছাড়াও, দমদমের গোরাবাজার ছাড়াও বালিগঞ্জের ম্যান্ডেভিলে গার্ডেন এলাকায়ও অভিযানের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে ইডি-র দুটি গাড়ি এসে হাজির হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযান শুরু করা হয়। পাশাপাশি, হাওড়া, নিউ আলিপুর, বালিগঞ্জ, গোরাবাজার-সহ কলকাতার বিভিন্ন স্থানে একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।

ইডি-র (ED) তদন্তে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আরও একটি বড় অভিযোগ উঠে এসেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি ভুয়ো কোম্পানি খুলে আর্থিক প্রতারণা করেছেন। ইডি সূত্রে জানা গেছে, এই ব্যবসায়ী ২২টি কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। তার মধ্যে বেশ কিছু সেল কোম্পানি রয়েছে, যেখানে অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। সেল কোম্পানির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে যে, ব্যবসায়ীর নিজস্ব লাভের জন্য এই প্রতারণার কাজ করা হয়েছে।

এছাড়া, এদিন ২২টি কোম্পানির ডিরেক্টর, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর এবং সদস্যদের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। ইডি-র টিম এই ২২টি কোম্পানির হিসাব খতিয়ে দেখছে এবং সেল কোম্পানি ব্যবস্থার মাধ্যমে কি ধরনের আর্থিক প্রতারণা করা হয়েছে, তা তদন্ত করছে।

এদিকে, ইডি-র (ED) তদন্তকারীরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খতিয়ে দেখছেন। তারা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসূত্র খুঁজছেন। অর্থাৎ, এই আর্থিক প্রতারণার ঘটনায় কোনো ক্ষমতাশালী ব্যক্তি জড়িত আছে কি না, তা উদঘাটনের চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা। এমনকি ইডি-র দৃষ্টি ছিল ওই ব্যবসায়ী এবং তার সহযোগীদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি নিয়েও। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা এই ব্যাপারে যে কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বের করার জন্য কঠোরভাবে তদন্ত করছে।

ইডি-র (ED) এই অভিযান কার্যত কলকাতার ব্যবসায়িক মহলে এক উত্তেজনা তৈরি করেছে। কারণ, একজন বড় ব্যবসায়ী জড়িত এমন আর্থিক প্রতারণার ঘটনা যদি সামনে আসে, তবে তা শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গেরই নয়, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই ইডি-র পদক্ষেপ ও তদন্তে এখন সকলের নজর।

এদিকে, ইডি-র (ED) এই অভিযান চলাকালীন ব্যবসায়ী এবং তার পরিবারের সদস্যরা নানা ধরনের উদ্বেগে ভুগছেন। তারা আশঙ্কা করছেন যে, এই আর্থিক প্রতারণার কারণে তাদের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে। তবে, ইডি-র কর্মকর্তারা তাদের পক্ষ থেকে যা কিছু করা দরকার, তা নির্দিষ্ট আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে চালিয়ে যেতে থাকবে বলে জানিয়েছেন।

এর আগে, ইডি (ED) এবং সিবিআইয়ের অভিযানও কলকাতায় বেশ কয়েকটি বড় আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ঘটেছিল, যেখানে ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। এসব ঘটনায় কলকাতার ব্যবসায়িক পরিবেশ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। তবে, এখনো পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের শীর্ষ ব্যক্তির নাম প্রকাশ পায়নি।

সামগ্রিকভাবে, এই অভিযান কলকাতার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের জন্য একটি বড় সতর্কতা হিসেবে ধরা হতে পারে, যেহেতু বড় ঋণ, প্রতারণা এবং শেল কোম্পানির মাধ্যমে অস্বচ্ছ আর্থিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে অনেক গোপনীয়তা রয়েছে, যা অনেকে খোলাসা করার চেষ্টা করছে।

এখন পর্যন্ত এই অভিযান নিয়ে চূড়ান্ত কোনো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। তবে, সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ইডি-র (ED)তদন্ত অত্যন্ত গোপনে চলছে এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসলে তা সামনে আনা হবে।