নিয়োগের পর এবার মেডিক্যালে ভর্তি দুর্নীতি, ফের বড়সড় তদন্তে ইডি

নিয়োগ দুর্নীতির রেশ কাটতে না কাটতেই আবার নতুন দুর্নীতির অভিযোগে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। এবার এনআরআই কোটায় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস আসন বিক্রির অভিযোগে (Scam in…

Scam in Medical College Admission in Kolkata

নিয়োগ দুর্নীতির রেশ কাটতে না কাটতেই আবার নতুন দুর্নীতির অভিযোগে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। এবার এনআরআই কোটায় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস আসন বিক্রির অভিযোগে (Scam in Medical College) শহরের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরাও।

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মোট পাঁচটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কলকাতার কড়েয়া এলাকা। কড়েয়া থানার কাছে অবস্থিত তারক দত্ত রোডের একটি আবাসনে অভিযান চালান আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, ওই বাড়িতে মুনমুন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী ও তাঁর স্বামী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন। অভিযানের সময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন দু’জনেই।

   

অন্যদিকে, নিউ টাউনের সিই ২৮ নম্বর আবাসনের চার তলাতেও চলে ইডি-র তল্লাশি। ওই ঠিকানায় আগে একটি কোচিং সেন্টার—‘এডুকেশন ওয়ার্ল্ড’—চালু ছিল। অভিযোগ, এনআরআই কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে মিডলম্যান হিসেবে কাজ করতেন সৌরভ সাহা, যিনি এই ঠিকানাতেই থাকেন। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌরভের মাধ্যমেই বহু ভুয়ো সার্টিফিকেট তৈরি করে মোটা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন বিক্রি করা হয়েছে।

এই মামলায় আগেও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষণ শেঠের মেডিক্যাল কলেজ সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালায় ইডি। মূল অভিযোগ, নির্দিষ্ট কিছু এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশে বসবাসকারী নন এমন ব্যক্তিদের ভুয়ো ‘NRI সার্টিফিকেট’ জোগাড় করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছিল। এই পুরো প্রক্রিয়াটি চলছিল মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে।

এই চক্র শুধু পশ্চিমবঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়, ইডি জানিয়েছে যে ওড়িশা, তামিলনাড়ু সহ আরও কিছু রাজ্যেও এই ধরণের জালিয়াতি সক্রিয়। ইতিমধ্যেই একাধিক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এই দুর্নীতির তদন্তের আওতায় এসেছে।

কলকাতার ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। অভিযোগে বলা হয়, বহু ছাত্রছাত্রী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ পাচ্ছেন না, কারণ টাকার জোরে আসন কিনে নিচ্ছেন ভুয়ো ‘এনআরআই’ প্রার্থীরা। এরপরই তদন্তে নামে ইডি এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা একাধিক প্রমাণ হাতে পায়।

এই দুর্নীতি নিঃসন্দেহে আবার প্রমাণ করল, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নজরদারির অভাব কতটা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা, তাও আবার চিকিৎসা শিক্ষার মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রে, সমাজের জন্য এক অশুভ বার্তা।

ইডি জানিয়েছে, এই তদন্ত আরও বিস্তৃত হতে চলেছে। যেসব মেডিক্যাল কলেজ ও ব্যক্তিরা এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচিত, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে কড়া নিয়ম চালু করা এবং বিদ্যমান ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে তোলা।

Advertisements