অবিরাম বৃষ্টির সঙ্গে ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন)-র ছাড়া জল (DVC) মিলে জলবন্দি হয়ে পড়েছে খানাকুলের বিস্তীর্ণ এলাকা। আরামবাগ মহকুমার অন্তর্গত খানাকুল ২ নম্বর ব্লকের অন্তত চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ২০ থেকে ২২টি গ্রাম ইতিমধ্যেই আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে বন্যার ভয়াবহতা আরও বাড়বে।(DVC)
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের তালিকায় রয়েছে রাজহাটি, মাড়োখানা, পানশিউলি,(DVC) জগৎপুর, শাবলসিংহপুর, হানুয়া, ঢলডাঙা, জগদীশতলা এবং সুন্দরপুর। এই সমস্ত গ্রাম রূপনারায়ণ নদীর সংলগ্ন হওয়ায় নদীর জল বেড়ে কূল ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে জনবসতিতে। ইতিমধ্যেই বহু পরিবার জলবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।(DVC)
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, একাধিক রাস্তায় হাঁটুসমান জল জমে রয়েছে। (DVC) কোথাও কোথাও কোমর সমান জল। ফলে সাধারণ মানুষকে নৌকা বা বাঁশের ভেলায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। পানশিউলি–নন্দনপুর পিচ রাস্তা, রাজহাটি–পানশিউলি রোড সহ গড়েরঘাট-আরামবাগ রুট কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শাবলসিংহপুর ফুটবল মাঠের উপর দিয়ে চলছে নৌকা—এই ছবি এখন নতুন নয়, বরং প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় এখানকার চেনা দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।(DVC)
সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিভিসি নতুন করে একাধিক পর্যায়ে জল ছাড়ায় (DVC) দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণ নদীর জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। তার প্রভাবেই নদীবেষ্টিত খানাকুলের নিচু এলাকাগুলিতে জল ঢুকছে। বিশেষত মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণ নদীর সংযোগস্থলে, পানশিউলির কাছে, বিপদ আরও বেশি। ওই অঞ্চলটি হুগলি, হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে।(DVC)
স্থানীয় বাসিন্দা মির্জা নাজিবুল হক বলেন, “একদিকে লাগাতার বৃষ্টি, অন্যদিকে ডিভিসির(DVC) জল ছাড়া—সব মিলিয়ে গোটা গ্রাম জলে ডুবে যাচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছি না।” অন্যদিকে গ্রামের মহিলারা আরও ক্ষুব্ধ। ঝর্ণা দোলুই বলেন, “মাঠের সমস্ত আনাজপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ এল না, কোনও ত্রাণও মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা অসহায়।”(DVC)
সোনামণি হরিজন এবং সন্দীপ মাঝি জানান, (DVC) এখনও বাড়ির ভিতরে জল ঢোকেনি ঠিকই, কিন্তু নদীর জল যেভাবে বাড়ছে তাতে যে কোনও সময় ঘরে জল ঢুকে পড়তে পারে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। অনেকেই ইতিমধ্যেই গবাদি পশু ও ঘরের জিনিসপত্র উঁচু জায়গায় সরিয়ে রাখছেন।
জানা গিয়েছে, জেলা প্রশাসনের তরফে ব্লক প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও জরুরি ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে না কোনও ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে, না মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
বৃষ্টি ও নদীর জলস্তর বৃদ্ধির ফলে খাদ্যসঙ্কটও দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। গ্রামীণ রাস্তাগুলির উপর জল থাকায় দুধ, খাবার, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছনো কঠিন হয়ে পড়েছে।
সব মিলিয়ে খানাকুলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন ভয় আর অনিশ্চয়তার ছায়া। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রাকৃতিক স্বস্তির পাশাপাশি প্রয়োজন প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ। না হলে রূপনারায়ণের কূল ছাপিয়ে বিপদ আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে—এমনটাই আশঙ্কা সকলের।