কলকাতা: দুর্গাপুজো মানেই শুধু প্যান্ডেল হপিং নয়, সঙ্গে থাকে পেটপুজোর উৎসবও। পুজোর দিনগুলোয় কলকাতার রাস্তায় যেমন জমে ওঠে আলোকসজ্জা আর আড্ডার মেলা, তেমনই রেস্তোরাঁগুলিতেও (Kolkata Restaurants) চলে খাওয়া-দাওয়ার মহোৎসব। তবে এবার যদি বাইরে বেরোনো না হয়, চিন্তার কিছুই নেই। কারণ শহরের একাধিক নামকরা রেস্তোরাঁ পুজোর সময় চালু রাখছে ২৪ ঘণ্টার ডেলিভারি সার্ভিস।
ভোরবেলায় গরম চা থেকে শুরু করে গভীর রাতের কফি, দুপুরে মোগলাই কিংবা সন্ধ্যায় চাইনিজ—যা খুশি অর্ডার করুন, মুহূর্তেই তা পৌঁছে যাবে আপনার দরজায়। পুজো উপলক্ষে রেস্তোরাঁগুলির তরফে থাকছে নানা রকম অফার ও বিশেষ প্যাকেজ। ষষ্ঠী থেকেই চালু হবে বুফে লাঞ্চ ও ডিনার, থাকবে অষ্টমীর ভোগ, নবমীর পাঁঠার ঝোল সহ পুজো স্পেশাল থালি।
শুধু বাঙালি রেস্তোরাঁ নয়, যেসব রেস্তোরাঁ সারা বছর কন্টিনেন্টাল খাবার পরিবেশন করে, তারাও পুজোর ক’দিন বাঙালি রান্নার আয়োজন রেখেছে। গত বছর পুজোয় সবচেয়ে বেশি অর্ডার এসেছিল বিরিয়ানির জন্য। এবারও কি সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ থাকবে, না অন্য কোনও ডিশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে—সেটাই দেখার বিষয়।
তবে একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—আবহাওয়া। গত বছর টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তায় জল জমে বহু অ্যাপ ডেলিভারি পরিষেবা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। এবারে কি একই পরিস্থিতি তৈরি হবে? হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নবমী ও দশমীতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে রেস্তোরাঁ ও ফুড অ্যাপ সংস্থাগুলির এখন নজর আকাশে।
ডিশের জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিরিয়ানির ঠিক পরেই রয়েছে গুলাব জামুন। গত বছর শুধুমাত্র একটি ডেলিভারি অ্যাপ থেকেই পুজোর সময় প্রায় ৭৭ লক্ষ গুলাব জামুন অর্ডার হয়েছিল। বিরিয়ানির পাশাপাশি চিকেন ও মাটন ডিশ এবং চাইনিজ খাবারেরও ছিল বিপুল চাহিদা। সব মিলিয়ে পুজোর ক’দিনে কলকাতার রেস্তোরাঁ শিল্পে প্রায় ১১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল।
এ বছরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রেস্তোরাঁগুলি আনছে আকর্ষণীয় অফার ও থালি প্যাকেজ। বাঙালি রেস্তোরাঁগুলি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে থালি ও বুফে মেনুতে। রেস্তোরাঁ মালিকদের মতে, পুজোর সময় ভিড় এতটাই বেশি থাকে যে আলাদা আলাদা অর্ডার নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সেট মেনু রাখলে রান্নাঘরের চাপ কমে এবং দ্রুত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়।
পুজোয় বুফের দাম ৮৫০ থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১৩০০ টাকা পর্যন্ত। প্রিমিয়াম রেস্তোরাঁগুলিতে দাম কিছুটা বেশি হলেও জনপ্রিয়তা মূলত স্ট্যান্ডার্ড মেনুতেই। থালির দাম ১৯৯ থেকে শুরু হয়ে ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই থালিগুলি ডেলিভারি অ্যাপগুলিতেও পাওয়া যাবে।
ওয়ান পট মিল হওয়ায় বিরিয়ানির চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। পাশাপাশি, পুজোর সময়ে আইসক্রিম এবং মিষ্টির অর্ডারও প্রচুর বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে কলকাতাবাসীর পেটপুজোর সব ব্যবস্থাই এক ক্লিক দূরে।
এখন দেখার বিষয়, প্রকৃতি কতটা সহায়তা করে। যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে ২০২৫-এর দুর্গাপুজোয় খাওয়া-দাওয়ার বাজার ছুঁয়ে ফেলতে পারে আরও নতুন রেকর্ড।