কলকাতার দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) এখন শুধু শহরের উৎসব নয়, বিশ্ব সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ। ২০২১ সালে ইউনেস্কোর ‘ইনট্যাঞ্জিবল হেরিটেজ’ বা অমূর্ত ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে এই উৎসবকে ঘিরে উৎসাহ, আয়োজন এবং ভিড় আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। প্রতিবছর প্রায় তিন কোটিরও বেশি মানুষ মহানগরের রাজপথে নেমে আসেন প্রতিমা ও মণ্ডপ দর্শনের জন্য। কিন্তু এত ভিড়ের কারণে বয়স্ক মানুষ বা যাঁরা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের পক্ষে ঠাকুর দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
এই বিশেষ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কর্মরত সংগঠন ‘মাস–আর্ট’ এক অভিনব পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ বছর দুর্গাপুজোর আগে, অর্থাৎ ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর, তারা আয়োজন করতে চলেছে এক বিশেষ ‘প্রিভিউ শো’। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য—বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ মানুষদের জন্য দুর্গাপুজো দর্শনকে সহজ ও সুরক্ষিত করে তোলা।
সংগঠনের সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি বসু শুভ জানিয়েছেন, এ বছর শহরের ২৪টি বারোয়ারি পুজো এবং একটি বনেদি বাড়ির পুজো এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—দক্ষিণদাঁড়ি ইয়ুথ, অর্জুনপুর আমরা সবাই, দমদম তরুণ দল, দমদমপার্ক তরুণ সংঘ, টালা প্রত্যয়, হাতিবাগান নবীনপল্লি, হাতিবাগান সর্বজনীন, কাশী বোস লেন, চালতাবাগান সর্বজনীন, চোরবাগান সর্বজনীন, বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি, রাজডাঙা নব উদয় সংঘ, হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীন, সমাজসেবী সংঘ, ত্রিধারা অকালবোধন, প্রতাপাদিত্য রোড ত্রিকোণ পার্ক, আলিপুর সর্বজনীন, বেহালা নতুন দল, বেহালা ফ্রেন্ডস, ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক, বড়িশা ক্লাব, ৪১ পল্লি ক্লাব, নাকতলা উদয়ন সংঘ এবং সন্তোষপুর লেকপল্লি। এ ছাড়াও, উত্তর কলকাতার প্রখ্যাত বদন রায়ের বাড়ির পুজোও থাকছে এই প্রিভিউ শো-তে।
বিশেষ আকর্ষণ হল, দর্শনার্থীরা ভিড় এড়িয়ে সন্ধে ৬টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সময়ে এই পুজোগুলি উপভোগ করতে পারবেন। ফলে দীর্ঘ যানজট বা ভিড়ের চাপে হাঁপিয়ে ওঠার ভয় থাকবে না।
সবচেয়ে বড় বিষয়, এই উদ্যোগের জন্য খড়্গপুর আইআইটির স্থাপত্য ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি এলাকার জন্য আলাদা আলাদা নির্দেশিকা (গাইডলাইন) তৈরি করছেন। অধ্যাপিকা হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রতিটি জায়গার পরিস্থিতি অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ দর্শনার্থীদের কোনোরকম অসুবিধা না হয়।
এ ছাড়াও, ‘প্রিভিউ শো ২০২৫’–এর পাস বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। আবেদন করার জন্য দর্শনার্থীদের massArt.in ওয়েবসাইটে গিয়ে বা সংগঠনের কিউআর কোড স্ক্যান করে কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে, আবেদনকারীর কাছে ডিজিটাল বা প্রিন্ট আকারে পাস পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
‘ওয়ার্ল্ডস বিগেস্ট পাবলিক আর্ট ফেস্টিভ্যাল’ নামে খ্যাত কলকাতার দুর্গাপুজো দিন দিন আরও আন্তর্জাতিক হয়ে উঠছে। এমন আবহে, মাস–আর্ট–এর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক অনন্য পদক্ষেপ। এর ফলে যাঁরা এতদিন ভিড়ের কারণে প্রতিমা দর্শনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতেন, তাঁরাও সমানভাবে এই সাংস্কৃতিক উৎসবে শরিক হতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, এবারের দুর্গাপুজো শুধুমাত্র আড়ম্বর ও ঐতিহ্যের প্রদর্শনী নয়, বরং সবার জন্য সমানভাবে উপভোগ্য এক গণ–উৎসব হয়ে উঠতে চলেছে।