কলকাতা: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতা চিকিৎসক কাণ্ডের এক বছরের বর্ষপূর্তিতে ফের উত্তেজনা ছড়াল রাজ্যের রাজনৈতিক মহল ও চিকিৎসক মহলে। এদিন প্রকৃত বিচারের দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দেয় রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। সেই কর্মসূচিতে যোগ দেন নির্যাতিতার বাবা–মা, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) এবং একাধিক বিজেপি বিধায়ক। কিন্তু একই দিনে নবান্ন অভিযানের বদলে ‘কালীঘাট চলো’ স্লোগান তুলে আলাদা কর্মসূচি আয়োজন করেন অভয়া মঞ্চের প্রতিবাদী চিকিৎসকরা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় তখনই—কারণ, চিকিৎসকরা নবান্ন অভিযানে যোগ না দেওয়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলেন তাঁদের ভূমিকা নিয়ে। এরপর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় যখন নবান্ন অভিযানের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে নির্যাতিতার মা আহত হন বলে অভিযোগ ওঠে। আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এবং পরে ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর কপাল ও পিঠে আঘাত লেগেছে, তবে অবস্থা স্থিতিশীল।
অভয়া মঞ্চের আহ্বায়ক চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী সরাসরি অভিযোগ করেন—”যদি পুলিশের লাঠির আঘাতে তিনি আহত হন, তবে তাঁকে নবান্ন অভিযানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজেপি ও বিরোধী দলনেতা সমানভাবে দায়ী।” চিকিৎসক মানস গুমটাও একই অভিযোগ তুলে প্রশ্ন তোলেন, কেন নির্যাতিতার মাকে পুলিশের আঘাত সহ্য করতে হবে।
অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তোলেন, “পুলিশ নির্যাতিতার মা–বাবাকে খুন করার চক্রান্ত করেছিল।” তবে বিজেপি বা শুভেন্দুর পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের অভিযোগের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনৈতিক–চিকিৎসক মহল কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে বিজেপি দাবি করছে, সরকারের পুলিশ বাহিনী আন্দোলন দমাতে হিংসা চালাচ্ছে; অন্যদিকে প্রতিবাদী চিকিৎসকরা বলছেন, রাজনীতির মঞ্চে তাঁদের আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা তাঁদের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।
এদিন কালীঘাটের সভা থেকে অভয়া মঞ্চ ঘোষণা করে—আগামী ১৪ অগাস্ট রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ‘রাত দখল’ কর্মসূচি পালন করা হবে গোটা রাজ্য জুড়ে। এর মাধ্যমে আরজি কর কাণ্ডে দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার চাওয়া হবে। রাত ১২টার পর স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এবং রাজ্যের সর্বত্র স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়, অভয়ার স্মরণে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই দ্বন্দ্বের ফলে আরজি কর কাণ্ডে বিচারের লড়াই নতুন মোড় নিতে পারে। বিরোধী দল ও চিকিৎসক আন্দোলন একসঙ্গে না চললে সরকারের ওপর চাপ কিছুটা হলেও হালকা হতে পারে। আবার অন্যদিকে, একই উদ্দেশ্য নিয়ে আলাদা পথে হাঁটার ফলে আন্দোলনের বহুমাত্রিকতা বেড়ে যেতে পারে, যা জনসমর্থন ধরে রাখতে সহায়ক হতে পারে।
আরজি কর কাণ্ড শুধু একটি হাসপাতালের ঘটনা নয়—এটি নারী নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনআস্থার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাই এই ঘটনার বর্ষপূর্তিতে বিরোধ, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের এই চিত্র আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।