২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে। বিশেষত বিজেপির অন্দরে যে অস্থিরতা এবং ক্ষোভ ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে, তার বড় প্রমাণ রাখলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দমদমের জনসভা নিয়ে তিনি যে ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে গেল বিজেপির ভেতরের অশান্তি কতটা তীব্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দমদমের জনসভায় দিলীপ ঘোষের আমন্ত্রণই ছিল না। অথচ সেই মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিং, তাপস রায়দের মতো একঝাঁক দলবদলু নেতা— যারা একসময় তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন, পরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ নিয়েই প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিলেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, “মঞ্চে এই সব দলবদলু নেতারা আলো করে বসে থাকাতেই প্রধানমন্ত্রীর সভা কার্যত ফাঁকা ছিল। মাত্র পাঁচ হাজার লোক এসেছিল, যা ভাবাই যায় না।”
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির(Dilip Ghosh) এই বক্তব্য শুধুমাত্র জনসমাগম কম হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ নয়, বরং বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তোলা। দিলীপের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী, তাপস রায়, অর্জুন সিং, সজল ঘোষ প্রমুখদের দেখে মানুষ বিজেপির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এঁরা কি বিজেপি? এঁদের বিরুদ্ধেই তো বিজেপি লড়াই করেছিল। এখন এঁদের মঞ্চে বসানো হচ্ছে। মানুষ কীভাবে বিশ্বাস করবে?”
মোদির সভায় ভিড় কম হওয়া নিয়ে দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh) আরও বলেন, “আমরা সাধারণ মিছিল বা সভা করলেও এর চেয়ে বেশি মানুষ আসে। প্রধানমন্ত্রী যখন সভা করবেন, সেখানে মাত্র পাঁচ হাজার লোক হবে, তা তো কল্পনাই করা যায় না। দর্শক আসনে লোকজন বসে গল্প করছিল। সেই জোশটাই নেই। এভাবে কি চলবে?” তাঁর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, তিনি বিজেপির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন।
দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh) আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সাফল্যের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। তাঁর ভাষায়, “খুব খারাপ, খুব খারাপ। লড়াইটা হতে চলেছে ২০২১-এর আসন ধরে রাখার লড়াই। সেটাও এখন দূর অস্ত মনে হচ্ছে।” অর্থাৎ, ভবিষ্যৎ নিয়ে দলের ভেতরে কতটা হতাশা তৈরি হয়েছে, তা কার্যত প্রকাশ্যে এনে দিলেন দিলীপ।
তবে সবকিছুর পরও দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh) একেবারে ভেঙে পড়েননি। বেঙ্গালুরুতে ধর্মগুরু রবিশংকরের আশ্রমে গিয়ে তিনি মানসিক জোর পেয়েছেন বলেই জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “রবিশংকরজি আমাকে বলেছেন, ছোড়না নহি, লড়তে রহো।” সেই উৎসাহ নিয়েই তিনি ফের কাজে ফিরেছেন। কলকাতায় ফিরে বেশ চনমনে দেখিয়েছে তাঁকে। নিজের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “পার্টি আমাকে যা কাজ দেবে, তাই করব। প্রতিদিন বিভিন্ন জনসংযোগ কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছি। ব্যস্ত রয়েছি।”
দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। তবে এভাবে প্রকাশ্যে দলের জনসভা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং সরাসরি দলবদলু নেতাদের দায়ী করা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকের মতে, এটি দলের ভেতরে চলা গোপন দ্বন্দ্বকে আরও প্রকট করে দিল।
অন্যদিকে, তৃণমূলও সুযোগ হাতছাড়া করছে না। তারা বলছে, দিলীপ ঘোষের বক্তব্যই প্রমাণ করছে বিজেপি ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে। মানুষের ভরসা পাচ্ছে না তারা। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দিলীপ ঘোষ একদিকে দলের ভেতরে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন, অন্যদিকে তিনি নিজের কর্মীদের উজ্জীবিত করতেও চাইছেন। কারণ, বিজেপির মূল কর্মী-সমর্থকরা এখনও তাঁকে ভরসা করেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) বিস্ফোরক মন্তব্য কেবল একটি জনসভা নিয়েই নয়, বরং ২০২৬-এর লড়াইয়ের আগে বিজেপির অন্দরের বাস্তব পরিস্থিতি উন্মোচন করে দিল। এখন দেখার বিষয়, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই বার্তার জবাব কীভাবে দেয় এবং আদৌ কি দলীয় ঐক্য ফের প্রতিষ্ঠা করতে পারে। বাংলার রাজনীতির জমিতে এই দ্বন্দ্ব নিঃসন্দেহে আসন্ন নির্বাচনের গতিপথে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে।