মমতাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তুলনা দিলীপের

ফের একবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। বুধবার সকালে নিউটাউনের ইকো পার্কে হাঁটার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে…

Dilip Ghosh Compares Mamata Banerjee to Donald Trump in Bengal Politics

ফের একবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। বুধবার সকালে নিউটাউনের ইকো পার্কে হাঁটার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) সরাসরি তুলনা করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) সঙ্গে।

দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, “ডোনাল্ড ট্রাম্প হল আন্তর্জাতিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্রাম্প যেমন সব বিষয়ে নিজেকে বড় নেতা ভাবেন, যুদ্ধ থামানোর দাবি করেন, আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেকে শান্তির দূত বলে তুলে ধরেন, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একধরনের ‘রাজনৈতিক জোকার’-এ পরিণত হয়েছেন। উনি যা বলেন, যেভাবে বলেন, তা এক কথায় হাস্যকর।”

   

দীঘার রথযাত্রা উৎসব নিয়েও তীব্র কটাক্ষ
সম্প্রতি দীঘায় সরকারি উদ্যোগে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে বড়ো মাপের উৎসবের আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এই উৎসবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এবং উৎসবের নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে কলকাতা পুলিশের একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট পাঠানো হয়েছে দীঘায়।

এই নিয়েই দিলীপবাবুর মন্তব্য, “দেখে মনে হচ্ছে, যেন এই প্রথম কেউ রথযাত্রা দেখছে! আর কোথাও কি রথযাত্রা হয় না? এই দেশে ৬০০ বছর ধরে রথযাত্রা হচ্ছে। কিন্তু এখানে হচ্ছে সরকারি টাকায় ভোটের প্রচার। যেন রথ নয়, ভোটযাত্রা হচ্ছে।”

তাঁর দাবি, এই রকম উৎসবের আড়ালে রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে তৃণমূল সরকার। কলকাতার দুর্গাপুজোর কার্নিভালের সঙ্গেও তুলনা টানেন দিলীপ ঘোষ, বলেন, “এটাই ওনার (মমতার) একমাত্র অ্যাচিভমেন্ট। সরকারে থাকাকালীন একটিও শিল্প আনতে পারলেন না। বরং রাস্তায় চাকরিহারা যুবকরা বসে আছে, আর সরকার মেতে আছে উৎসবে।”

পুলিশ প্রসঙ্গে আক্রমণ
কালীগঞ্জে শিশু মৃত্যুর ঘটনার কথা টেনে দিলীপ ঘোষ বলেন, “যে পুলিশ প্রশাসন শুধু উৎসবে ব্যস্ত, সেই পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্ত না হয়ে যায় কোথায়? প্রকাশ্যে দিনের আলোয় বোমা নিয়ে মিছিল হয়েছে, আর পুলিশ দেখেও কিছু করেনি। বগটুই কাণ্ডের মতো এটাও ধামাচাপা পড়ে যাবে। যাদের ওপর বোমা পড়ল, যারা সন্তান হারালো, তাদের হাহাকার কেউ শুনবে না।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলার পুলিশ আজ দুর্বৃত্তদের হাতে। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। পুলিশের কাজ রক্ষা করা, উৎসব পালন নয়। আজ পুলিশকে শুধু মঞ্চ সাজাতে দেখা যায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে নয়।”

Advertisements

‘বাংলা’ ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, বাংলা বললেই কেন্দ্রীয় সরকার অবজ্ঞা করে। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দিলীপ ঘোষ বলেন, “কে পশ্চিমবঙ্গের আর কে বাংলাদেশের বোঝা যায় না। বাংলাদেশের লোক এসে এখানে আধার, রেশন কার্ড করিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসন এদের পরিচয় যাচাই করছে না। সত্যিই ওরা এপার বাংলা না ওপার বাংলা সেটা জানা দরকার।”

“জগন্নাথ দেব তার জায়গায় থাক, মুখ্যমন্ত্রী ভোটে ব্যস্ত”
রথযাত্রা প্রসঙ্গে আরও একধাপ এগিয়ে বলেন দিলীপ ঘোষ, “জগন্নাথ দেব তার নিজের জায়গায় আছেন, রথ হবে সেটা ভালো কথা। কিন্তু প্রশাসনের সম্পূর্ণ মনোযোগ শুধু রথে কেন? মানুষ চাকরি চায়, চিকিৎসা চায়, শিক্ষা চায়। ওনার কাছে শুধু উৎসব আর মিছিল। মানুষের সমস্যা নেই বলে মনে করছেন, সেটা খুব বড় ভুল করছেন মুখ্যমন্ত্রী।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একাধিক নেতা পাল্টা বলেছেন, “বিজেপির ব্যর্থতা ঢাকতেই দিলীপবাবু এধরনের কথা বলছেন। ২০২১-এ বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে ভোটে সমর্থন করেছে, তা বিজেপির গাত্রদাহ এখনও কমেনি। তাই গালমন্দ করে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে ওরা।”

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিছক বিতর্ক তৈরির জন্য হলেও, সেটা রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল তুলবে নিশ্চিতভাবেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো আন্তর্জাতিক আলোচিত একটি ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর তুলনা করে তিনি বকলমে মমতার ‘অতিমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ রাজনীতির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

এই মুহূর্তে রাজ্যের রাজনীতিতে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ও উত্তেজনা চলছেই। তার মধ্যে দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য রাজনীতির আবহ আরও গরম করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে কী বলেন, এখন সেদিকেই নজর সকলের।