দুই বাংলার দুই রাজধানী—কলকাতা (Kolkata) এবং ঢাকা (Dhaka)। গঙ্গাপাড়ের কলকাতা বয়সে পদ্মাপাড়ের ঢাকার তুলনায় অনেক বড়। ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে কলকাতা সর্বদা একটি অগ্রগামী শহর হিসেবে গণ্য হয়ে এসেছে। ব্রিটিশ আমলে এটি ভারতের রাজধানী ছিল এবং আজও পূর্ব ভারতের বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, ঢাকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে তীব্র গতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়েছে, বিশেষ করে শিল্প ও শিক্ষা ক্ষেত্রে। তবে, একটি বিস্ময়কর তথ্যে কলকাতাকে পিছনে ফেলে ঢাকা এগিয়ে গেছে—এবং সেটি হলো জনসংখ্যা। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় ২৩.৯ মিলিয়ন, যা কলকাতার মেট্রোপলিটন এলাকার জনসংখ্যা (২০.৫ মিলিয়ন) এর তুলনায় অনেক বেশি। এই তথ্য বিশ্ব জনসংখ্যা পর্যালোচনা (World Population Review) থেকে সংগৃহীত, যা ২০২৫ সালের জন্য প্রকাশিত হয়েছে।
ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শহরে বৃহৎ পরিমাণে মানুষের অভিবাসন ঘটছে। গ্রামে চাকরি ও উপার্জনের সুযোগ কমে যাওয়ায় এবং শহরে শিল্পক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বাড়ার কারণে মানুষ ঢাকায় আসছে। দ্বিতীয়ত, ঢাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা এখানে উন্নত জীবনযাপনের আশা জাগিয়ে তুলেছে। তৃতীয়ত, শহরের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রসার ঢাকাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে, এই দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরে বাস্তুভিড়, যানজট এবং পরিবেশ দূষণের সমস্যা তীব্র হয়ে উঠেছে।
কলকাতার অবস্থা
কলকাতার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিছুটা ধীর গতিতে চলছে। ২০২৫ সালের আনুমানিক তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৬.৫৭ মিলিয়ন, কিন্তু মেট্রোপলিটন এলাকা মিলিয়ে ২০.৫ মিলিয়ন। কলকাতা একসময় ভারতের সবচেয়ে জনবহুল শহর ছিল, তবে শিল্পক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের অন্যান্য শহরগুলোর উন্নতি এবং গ্রামীণ অঞ্চল থেকে মানুষের অভিবাসনের হার কমে যাওয়ার কারণে এর জনসংখ্যা বৃদ্ধি ধীর হয়েছে। তবে, কলকাতা এখনো শিক্ষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে আগেকার গৌরব ধরে রেখেছে। শহরটি এখন স্মার্ট সিটি প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জনসংখ্যার চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
তুলনা ও প্রভাব
ঢাকা ও কলকাতার জনসংখ্যার তুলনা করলে দেখা যায়, ঢাকা এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর হিসেবে রয়েছে, যখন কলকাতা ২২তম স্থানে রয়েছে। এই পার্থক্যের পেছনে ঢাকার দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঢাকার জন্য চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে। শহরের বেশিরভাগ অংশে স্লাম এলাকা বেড়ে গেছে, যা জল সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে বাধা হচ্ছে। অন্যদিকে, কলকাতা এই সমস্যাগুলোর তুলনায় বেশ ভালো পরিস্থিতিতে রয়েছে, যদিও এটিও শহরের পরিকাঠামোর উন্নতি চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা টের পাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা ভবিষ্যতে আরও বড় শহর হয়ে উঠতে পারে, তবে এর জন্য পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কলকাতার ক্ষেত্রে, শহরটি নতুন প্রযুক্তি ও শিল্পের মাধ্যমে নিজেকে পুনর্গঠন করতে পারলে জনসংখ্যার চাপ কমিয়ে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব। দুটি শহরের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা বাঙালি সংস্কৃতির জন্য একটি সুযোগ হতে পারে, যদি উভয় দেশই সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়।
ঢাকা কলকাতাকে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে হারিয়ে এগিয়ে গেছে, কিন্তু এই জয়ের পেছনে গভীর চ্যালেঞ্জ লুকিয়ে আছে। কলকাতা তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুই শহরের এই প্রগতি বাঙালি জাতির জন্য গর্বের বিষয়, তবে এর সঙ্গে জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া অপরিহার্য। ২০২৫ সালের এই তথ্য আমাদের দুটি শহরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিকে ভাবতে বাধ্য করছে।