সম্প্রতি দিল্লিতে এক বাঙালি পরিবারকে হেনস্থা করার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন, যেখানে এক ব্যক্তি দাবি করেন, দিল্লি পুলিশের হাতে তাঁর স্ত্রী ও দেড় বছরের সন্তান আক্রান্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাকে বিজেপির ‘ভাষা সন্ত্রাস’ ও ‘বাঙালি বিদ্বেষ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তবে এই অভিযোগকে “ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে খারিজ করে দিল পূর্ব দিল্লি পুলিশ।
ভাষা আন্দোলনের দিনে বীরভূম থেকে এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিয়োতে এক ব্যক্তি বলেন, দিল্লি পুলিশের মারধরের শিকার হয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও সন্তান। ভিডিয়োর বক্তব্য ছিল স্পষ্ট— “আমার বউকে মারল, আমার বাচ্চাকেও ঠেলে দিল।” এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে তৃণমূল নেত্রী লেখেন, “এই দেশে বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিজেপির শুরু করা ভাষা সন্ত্রাসের হিংসা থেকে পরিত্রাণ পেল না একটা শিশুও। দেশকে এরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?”
এই প্রসঙ্গে সোমবার সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পূর্ব দিল্লির ডিসিপি অভিষেক ধানিয়া জানান, ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত শুরু করে দিল্লি পুলিশ। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং মাঠ পর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা চলে। সেই প্রেক্ষিতেই পুলিশের তদন্তকারী দল ওই পরিবারটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে।
ধানিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, পুলিশ জানতে পারে— ভিডিয়োটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। পরিবারটি স্বীকার করেছে, এই কাজ তারা করেছে এক আত্মীয়ের কথায়, যিনি আবার এই নির্দেশ পেয়েছিলেন মালদহের এক রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে। ডিসিপি ধানিয়া জানান, “এই ভিডিয়োটি একেবারেই ভুয়ো, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার ছাড়া কিছুই নয়।”
এই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, “এই পুরো ঘটনাটা তৃণমূল কংগ্রেসের পরিকল্পিত নাটক। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সেই পরিবার স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোথাও কোনও পুলিশি হেনস্থার প্রমাণ নেই।” তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এই ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। বাঙালি আবেগকে বারবার ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তৃণমূল।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একদিকে বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা প্রচারের’ অভিযোগ তুলছে, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এই তদন্তকে ‘পুলিশ ও বিজেপির যৌথ চক্রান্ত’ বলে দাবি করতে পারে।
যদিও এখনো পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূলের পক্ষ থেকে দিল্লি পুলিশের এই খণ্ডনের বিরুদ্ধে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে আগামী দিনে এই বিতর্ক আরও গভীর হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
সংক্ষেপে, এই ঘটনা শুধু রাজনৈতিক তরজা নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়া এবং জনমতের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তারও একটি নিদর্শন। তথ্য যাচাই ও বাস্তবতা যাচাইয়ের গুরুত্ব আবারও প্রমাণ করল এই বিতর্কিত পর্ব।