১৬ ডিসেম্বর কলকাতায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা

বাংলাদেশের (Bangladesh) বিজয় দিবস (Victory Day) ১৬ ডিসেম্বর (December)। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অত্যন্ত গৌরবময় দিন, যখন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের…

jammu-and-kashmir-bsf-shot-dead-pakistani-intruder-another-arrested-in-separate-incidents-along LOC

বাংলাদেশের (Bangladesh) বিজয় দিবস (Victory Day) ১৬ ডিসেম্বর (December)। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অত্যন্ত গৌরবময় দিন, যখন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। প্রতিবছরই এ দিনটি বাংলাদেশের মানুষদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তা উদযাপনের জন্য নানা অনুষ্ঠান এবং বিশেষ কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। কলকাতায়ও প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় বিজয় দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠান, যা একাধারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অনুষ্ঠানটি প্রতি বছরই হয়ে থাকে কলকাতার ঐতিহাসিক ফোর্ট উইলিয়ামে, যেখানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীসহ নানা শ্রেণির মানুষ উপস্থিত হয়ে বিজয়ের দিনের তাৎপর্য স্মরণ করেন।

এবারও, ১৬ ডিসেম্বর কলকাতায় (Kolkata) ফোর্ট উইলিয়ামে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি (representatives) দল আসবে। প্রতিবছরের মতোই, এতে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধারা, কূটনৈতিক কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

   

ফোর্ট উইলিয়ামে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান
প্রতিবছর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ১৬ ডিসেম্বর বিশেষ একটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং সেই সময়কার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান স্মরণ করা হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনেই পাক সেনারা বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করেছিল এবং দেশটি স্বাধীনতার ঘোষণা পেয়েছিল। তখনকার দিনগুলোর কথা আজও কলকাতার মানুষদের মনে লেগে থাকে, এবং তারা এই বিশেষ দিনটিকে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালন করে।

ফোর্ট উইলিয়ামের অনুষ্ঠানটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দুই দেশের সম্পর্কের দৃঢ়তা প্রকাশের একটি অন্যতম উদযাপন। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত থাকেন। এ বছরও বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতা আসছে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের গুরুত্ব
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ভারতীয় জনগণের অবদানকে সম্মান জানানো হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছে। ভারতের ভূমিকা, বিশেষ করে যুদ্ধের সময় তাদের সহযোগিতা, স্বাধীনতার সংগ্রামে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

অতীতে, এই দিনটি কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারতও উল্লাস এবং শ্রদ্ধার সাথে পালন করেছে। দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব এবং সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে এই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানটি বারবার প্রমাণ করেছে, তারা একে অপরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এবারের অনুষ্ঠান এবং সম্পর্কের নতুন প্রেক্ষাপট
তবে চলতি বছর বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে, বিশেষ করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু নতুন সমীকরণ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী এবারের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কোনো বিশেষ আলোচনা বা আলাপচারিতা হবে না।

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি যে, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারের পট পরিবর্তনের ফলে কিছুটা পরিবর্তন ঘটতে পারে, কিন্তু সেগুলি কোন অবস্থায় এসে দাঁড়ায়, তা এখনো অজানা। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানটি, তবুও, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সমর্থনকে তুলে ধরে এবং একে অপরকে সম্মান জানিয়ে সম্পর্ক আরও মজবুত করার জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা
এবারের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষত মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং তাদের অবদান স্মরণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের নায়করা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে সংগ্রাম করেছেন, তা আজও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। তাদের সাহসিকতা এবং ত্যাগই ছিল স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ামে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়, কারণ তারা ইতিহাসের এক অমর অংশ।

এছাড়াও, এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের কূটনৈতিক কর্মকর্তারা, যাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের দৃঢ়তাকেই প্রতিফলিত করে। এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপন হয় এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হয়।

বাংলাদেশের বিজয় দিবস শুধু একটি জাতীয় দিবস নয়, এটি দুই দেশের জনগণের মধ্যকার গভীর সম্পর্কের একটি চিত্র। কলকাতায় অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করার একটি মাধ্যম নয়, এটি ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রতীকও। এই অনুষ্ঠানে দুই দেশের কূটনৈতিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, স্বাধীনতার সংগ্রামে একসাথে লড়াই করা মানুষদের বন্ধুত্ব অটুট থাকে।

এবছরও এই ঐতিহাসিক দিনটি ধুমধাম সহকারে উদযাপিত হবে, যদিও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নতুন সমীকরণ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবুও এই অনুষ্ঠানটি আগামীতে আরও শক্তিশালী সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে, যা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।