যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন এক নতুন রূপ ধারণ করেছে, যখন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির তলায় চাপা পড়ে বিতর্কে জড়ালেন প্রথম বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়। শনিবার, যখন ছাত্রদের একটি গ্রুপ শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছিল, তখন হঠাৎ এক সাইড থেকে চলে আসে গাড়িটি। সেসময় বিক্ষোভের ভিড়ে ইন্দ্রানুজ গাড়ির তলায় চাপা পড়েন। ঘটনাটি সবার নজর কেড়ে নেয় এবং তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
পরে, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘এটি একটি দুর্ঘটনা, যা আকস্মিকভাবে ঘটেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি, তবে সংঘর্ষের মধ্যে গাড়ি চালানো কোনওভাবেই উপযুক্ত ছিল না।’’ তবে এই ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির গতি বাড়ানো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকভাবে না থাকাকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা রাজ্যজুড়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তারা দাবি করছেন, কেন ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালানো হয়েছিল এবং কেন গাড়ির গতি বাড়ানো হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করতে হবে।
এই ঘটনার পর তৃণমূলের মুখপাত্র এবং আইটি সেলের সভাপতি দেবাংশু ভট্টাচার্য সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, ‘‘গাড়ি চাপা পড়ার যে ছবি ভাইরাল হয়েছে তা একেবারেই ভুয়ো।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সিপিএম এই ছবি ব্যবহার করে মিথ্যাচার করছে এবং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’’ এর পাশাপাশি, দেবাংশু নিজের যুক্তিকে শক্তিশালী করতে একটি থালা এবং কাঠের প্লেট ব্যবহার করে ‘যুক্তি খাঁড়া’ নামক একটি ছবি এঁকে দেখান। তিনি বলেন, ‘‘যদি ইন্দ্রানুজ গাড়ির তলায় চাপা পড়ে চোখে আঘাত পেত, তাহলে সে কি পাঁচ মিনিট পর ইন্টারভিউ দেওয়ার অবস্থায় থাকতে পারত?’’
দেবাংশুর এই যুক্তির পর বিরোধীরা একযোগে তাঁর সমালোচনা করতে শুরু করেন। প্রাক্তন এসএফআই সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য দেবাংশুর মন্তব্যকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘তৃণমূলের নবীন মুখপাত্র ভিডিও ধরে সেকেন্ড মেপে দেখাচ্ছেন যে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় ইন্দ্রানুজ জখম হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নিজেই মিডিয়াতে বলেছেন যে তাঁর গাড়ির ধাক্কায় একজন ছাত্র আহত হয়েছে এবং সেজন্য তিনি দুঃখিত। তাহলে কে সঠিক?’’
এদিকে, ঘটনাটি নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ছাত্রদের একাংশ মনে করেন, গাড়ির ধাক্কায় যে ঘটনাটি ঘটেছে তা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন এবং ছাত্রদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। আবার কিছু ছাত্রের দাবি, এই ঘটনা মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে এবং আসল বিষয়টি আড়াল করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, অনেকেই মনে করছেন যে, এমন ধরনের ঘটনা যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তবে সেই প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য আরও স্পষ্ট হওয়া উচিত এবং ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করার চেষ্টা না করে তার সদর্থক সমাধান খোঁজা উচিত। তবে সিপিএম এবং অন্যান্য বিরোধী দল তৃণমূল সরকারের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিশেষ করে ছাত্রদের আন্দোলনকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে।
যেহেতু ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, এখন রাজ্যের রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্য সরকার, তৃণমূল এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্ক এখন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।