রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর (Health Department) সম্প্রতি একটি নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে পথ দুর্ঘটনায় (Accident) মৃত রোগীদের ডেথ অডিটের (Death Audit) তথ্য সংশ্লিষ্ট সরকারি পোর্টালে জমা দিতে হবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল দুর্ঘটনায় মৃতদের মৃত্যুর কারণ এবং আহতদের চিকিৎসায় গতি আনা সহ আগামী দিনে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো। শুধু মৃত্যুর কারণ বা আঘাতের ধরন চিহ্নিত করা নয়, দুর্ঘটনার স্থান, প্রকারভেদ, হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় এবং সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও বিশদ পর্যালোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে গত বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যেখানে জানানো হয়েছে, সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পথ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণকারী রোগীদের সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে ডিজিটাল ফরম্যাটে জমা দিতে হবে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য দপ্তর একটি ‘ডেথ অডিট’ রিপোর্ট তৈরি করবে। এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র মৃত্যু বা আঘাতের কারণ জানাতে সহায়তা করবে না, বরং দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও সংগ্রহ করবে, যা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে কাজে লাগবে।
ডেথ অডিটের প্রক্রিয়া ও লক্ষ্য:
ডেথ অডিটের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করা হবে, যেমন:
দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালের দূরত্ব কত ছিল?
হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সময় কত ছিল?
কোন ধরনের যানবাহন (যেমন, বাস, গাড়ি, বাইক ইত্যাদি) বা পথচারী বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে?
কোন ধরনের আঘাত বেশি প্রাণঘাতী হচ্ছে (যেমন, মাথা, মেরুদণ্ড, বুক ইত্যাদি)?
এছাড়া, স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসা সেবা এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে আঘাত নিয়ে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে নিউরোলজিস্ট বা নিউরোসার্জন নিয়োগের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর চেষ্টা করবে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার কমাতে এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে ট্রমা কেয়ার সেন্টার বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি):
গত মাসে, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর (Health Department) সরকারি হাসপাতালের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) তৈরি করে, যাতে পথ দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা আরও দ্রুত এবং কার্যকরী করা যায়। এর মাধ্যমে হাসপাতালগুলোকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে দুর্ঘটনাজনিত চিকিৎসা আরও দক্ষতার সঙ্গে দেওয়া সম্ভব হয়। স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে, এসওপি অনুসরণ করলে চিকিৎসা প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে এবং আক্রান্তদের অবস্থা দ্রুত স্থিতিশীল হতে পারে।
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ইন্টিগ্রেটেড রোড ট্র্যাফিক অ্যাক্সিডেন্ট (ইরাড) পোর্টালের মাধ্যমে দুর্ঘটনার পরবর্তী প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চালানো যাবে। ইরাড পোর্টাল দুর্ঘটনাজনিত তথ্য সংগ্রহের এবং তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম।
প্রশাসনিক সহযোগিতা ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর:
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর (Health Department) জানিয়েছে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরগুলো এই ডেথ অডিট রিপোর্ট সংগ্রহ করবে এবং সেগুলো পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরকেও পাঠানো হবে। এই তথ্যগুলোর মাধ্যমে, যেখানে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে, সেইসব স্থান এবং হাসপাতাল উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। সেইসাথে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাস্তার উন্নয়ন এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার কাজও করা হবে।
এছাড়া, হাসপাতালগুলোকে প্রভাবিত করতে এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় আরও উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে স্বাস্থ্য দপ্তর (Health Department) বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরি করা হতে পারে, যাতে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায়।
দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা:
রাজ্য সরকার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার কমানোর চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, শুধু দুর্ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণ করা নয়, বরং পরবর্তী সময়ে হাসপাতাল ব্যবস্থা এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। বিশেষ করে, যেখানে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে, সেখানকার রাস্তা সংস্কার এবং সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের (Health Department) মতে, যদি ডেথ অডিট কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়, তবে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। এতে করে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
রাজ্য স্বাস্থ্য (Health Department) দপ্তরের এই নতুন উদ্যোগটি পথ দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। ডেথ অডিটের মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ এবং চিকিৎসার গতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা যাবে, যা পরবর্তীতে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানোর এবং হাসপাতালে সেবার মান উন্নত করার জন্য কাজে লাগবে। পথ দুর্ঘটনার হারে যদি নিয়ন্ত্রণ আনা যায়, তবে একদিকে যেমন মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে, তেমনি অন্যদিকে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় আরও উন্নতি সাধিত হবে।